পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার অস্তিত্ব বিদ্যমান। মানুষের প্রধান কর্তব্য হল স্রষ্টার উপাসনা করা, আর এ উপাসনার শ্রেষ্ঠ পথ হলো তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসা। সৃষ্টিকে ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। মহাপ্রাণ মনীষী এবং ধর্মগুরু সকলেই এই সত্যকে মেনে নিয়েছেন যে, সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।

আমরা প্রতিদিন দেখি, পশু-পাখি, গাছপালা, এবং অন্যান্য জীবজগত কিভাবে একে অপরের প্রতি সহযোগিতা করে। এগুলো সবই স্রষ্টার একটি লীলাক্ষেত্র। স্রষ্টা মানবজাতিকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে গড়েছেন, তাই আমাদের এই দায়িত্ব রয়েছে যে, আমরা অন্যান্য জীবের প্রতি সদয় হই।

মানুষের কর্তব্য

মানুষের প্রথম কর্তব্য হলো জীবের প্রতি দয়া এবং ভালোবাসা প্রকাশ করা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “জীব সেবাই ঈশ্বর সেবা।” সুতরাং, যারা জীবের প্রতি সহানুভূতি দেখায়, তারা প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করে। অসহায় মানুষকে সাহায্য করা, ক্ষুধার্তের মুখে খাবার দেয়া—এসবই স্রষ্টার সেবা।

আমরা যখন গাছপালা, পশু-পাখি, এবং অন্যান্য প্রাণীর প্রতি অমানবিক আচরণ করি, তখন প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করি। আমাদের উচিত নিজেদের স্বার্থের জন্য প্রকৃতি এবং জীবজগতকে ধ্বংস না করা। কারণ এতে শুধু আমাদেরই ক্ষতি হচ্ছে না, বরং পুরো পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

সৃষ্টি ও স্রষ্টার সম্পর্ক

সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার প্রকাশ পাওয়া যায়। আমাদের উচিত সৃষ্টিকে প্রেমের দৃষ্টিতে দেখা। প্রতিটি জীবের মধ্যে স্রষ্টার উপস্থিতি রয়েছে। সুতরাং, যদি আমরা সৃষ্টিকে ভালোবাসি এবং সেবা করি, তবে আমরা আসলে স্রষ্টারই সেবা করছি।

বিভিন্ন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং মনীষীগণ একই কথা বলেছেন যে, স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভের জন্য দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং, সৃষ্টির মধ্যে থেকেই স্রষ্টার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। যারা মানুষের সেবা করে, তারাই প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের সেবা করে।

প্রকৃতি এবং মানবতার সম্পর্ক

প্রকৃতির যত্ন নেওয়া আমাদের কর্তব্য। আমরা যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে পারি, ততটাই স্রষ্টার প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন হবে। বন-জঙ্গলের রক্ষা, নদী-নালার যত্ন, এবং ক্ষুদ্র প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—এসব কাজ আমাদের করতে হবে।

যদি আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করি, তাহলে একদিন আমরা আমাদের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করতে পারি। জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ—এসবই আমাদের কর্মকাণ্ডের ফল। সুতরাং, আমাদের উচিত সৃষ্টির প্রতি যত্নবান হওয়া এবং তাদের রক্ষা করা।

উপসংহার

স্রষ্টার সন্তুষ্টি পাওয়ার একমাত্র পথ হলো সৃষ্টিকে ভালোবাসা। প্রতিটি জীবের প্রতি প্রেম এবং দয়ার হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা স্রষ্টার নিকটবর্তী হতে পারি। আমাদের উচিত নিজেদের মনে রাখতে হবে, যে প্রেম সৃষ্টির প্রতি, তা স্রষ্টার প্রতি প্রেমের সমান। তাই আসুন, আমরা সৃষ্টিকে ভালোবাসি এবং তার সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করি।