প্রিয় পাঠক, আজ আমরা একটি বিশেষ দোয়া নিয়ে আলোচনা করব, যা আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়তে হয়। এই দোয়া হলো দোয়া কুনুত। এটি বিতর নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নামাজের সময় বিভিন্ন দোয়া ও সুরা পড়া হয়, তার মধ্যে দোয়া কুনুত অন্যতম। চলুন, প্রথমে জানি দোয়া কুনুত কি এবং এটি কখন পড়তে হয়।

দোয়া কুনুতের আরবি শব্দ হলো “اَللَّهُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ…”। এই দোয়া বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর পাঠ করা হয়। দোয়া কুনুত আমাদের আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত, ক্ষমা এবং সাহায্য চাই।

দোয়া কুনুতের বাংলা উচ্চারণ হলো: “আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তা’ইনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা…” এর অর্থ হচ্ছে, “হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে সাহায্য চাই। তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। তোমার উপর ভরসা করি।” এর মাধ্যমে আমরা আমাদের অসংখ্য প্রয়োজন আল্লাহর কাছে তুলে ধরি।

এখন আমরা জানব, দোয়া কুনুত কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের আত্মার শান্তি আনে এবং আমাদের মনে দৃঢ়তা দেয়। যখন আমরা এই দোয়া পড়ি, তখন আমাদের মনে শান্তি আসে এবং আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের গুনাহ মাফ করার জন্য প্রার্থনা করি।

দোয়ায়ে কুনুত বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানুমিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাসকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’ বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া; ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক।

দোয়া কুনুতের অর্থ:

হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই কাছে ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ইমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সব মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আজাবকে ভয় করি। আর তোমার আজাব তো কাফেরদের জন্যই নির্ধারিত।

দোয়া কুনুতের ফজিলত

দোয়া কুনুতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনা করি।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “এক রাতে আমি নবী (সা.)-এর সাথে ছিলাম। তিনি উঠে দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। তারপর বিতর নামাজে গেলেন। প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সুরা আলা পাঠ করলেন, এরপর রুকু ও সেজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও কাফিরুন পড়লেন, তারপর রুকু ও সেজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতিহা ও ইখলাস পড়ে, রুকুর আগে কুনুত পড়লেন।” (সূত্র: কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১; নাসবুর রায়াহ : ২/১২৪)

 

আমরা জানি, নামাজে দোয়া, সুরা এবং অন্যান্য ধর্মীয় কার্যকলাপ আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং, দোয়া কুনুত আমাদের মধ্যে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অনুভূতি তৈরি করে এবং এটি আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে।

হযরত আনাস (রা.) থেকে জানা যায়, নবী (সা.) কখনো কখনো রুকুর আগে দোয়া কুনুত পড়তেন। কিছু ফকিহদের মতে, দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব। যদি কেউ ভুলক্রমে দোয়া কুনুত না পড়ে, তবে তাকে সাহু সিজদা করতে হবে। তবে, কেউ যদি মাঝে মাঝে দোয়া কুনুত না পড়ে, তাহলে তেমন সমস্যা নেই, কিন্তু নিয়মিতভাবে এটি পড়া উচিত।

এশার নামাজের পর বিতর নামাজ পড়ার সময় দোয়া কুনুত অবশ্যই পড়তে হবে। বিতর নামাজের সময়, তৃতীয় বা শেষ রাকাতে রুকুর আগে দোয়া কুনুত পড়তে হয়। এই দোয়া আল্লাহর সাথে গভীর আলাপের সুযোগ দেয়। যখন আমরা এই দোয়া পড়ি, তখন আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের একান্তভাবে উপস্থাপন করি এবং তাঁর রহমত আশা করি।

দোয়া কুনুতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করি। আমরা বলি, “হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি। তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকে সিজদা করি।” এই কথাগুলোর মাধ্যমে আমাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা তৈরি হয়।

দোয়ায়ে কুনুত

১. দোয়া কুনুতের অর্থ কি? দোয়া কুনুতের অর্থ হলো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের প্রার্থনা। এটি একটি বিশেষ দোয়া, যা বিতর নামাজে পড়া হয়।

২. দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়? দোয়া কুনুত পড়তে হয় বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে, যখন আমরা সূরা ফাতিহার পর দোয়া করি।

৩. দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ হবে কি? দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজের নিয়ম হলো, যদি কেউ ভুলক্রমে এটি না পড়ে, তবে সাহু সিজদা করতে হবে। তবে, ইচ্ছাকৃতভাবে দোয়া কুনুত না পড়লে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।

৪. দোয়া কুনুতের ফজিলত কি? দোয়া কুনুত আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, যা আমাদের গুনাহ মাফ করার এবং আল্লাহর রহমত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনি দোয়া কুনুত সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পেরেছেন। নামাজে দোয়া কুনুত পড়া আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেন নিয়মিত এই দোয়া পড়তে পারি এবং আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন এবং আমাদের নামাজের মাধ্যমে তাঁর সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করুন। আমীন।