দেশে বিগত ১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনা একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬০ হাজার ৯৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন আহত হয়েছেন। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা
শ্রেণী | তথ্য |
---|---|
মোট সড়ক দুর্ঘটনা | ৬০,৯৮০ |
মোট নিহত | ১,০৫,৩৩৮ |
মোট আহত | ১,৪৯,৮৪৭ |
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা | ২০,১২৪ |
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত | ৩৭,৫৫৩ (মোট নিহতের ৩৯.৬৫%) |
মোট আক্রান্ত ব্যক্তি | ২,৫৫,১৮৫ |
পরিচয় পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা | ৭৫,৮৮৪ |
– চালক | ১৪,৯২৮ |
– পথচারী | ১৭,১৫০ |
– পরিবহন শ্রমিক | ৭,৩৩২ |
– শিক্ষার্থী | ৮,৮০১ |
– শিক্ষক | ১,৫৯৩ |
– আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য | ৫১৪ |
– নারী | ১২,১০৯ |
– শিশু | ৮,০৬৭ |
– সাংবাদিক | ৫৫৯ |
– চিকিৎসক | ৪৩০ |
– বীর মুক্তিযোদ্ধা | ২৯৪ |
– শিল্পী | ৫৫ |
– আইনজীবী | ৩৬১ |
– প্রকৌশলী | ৩৩০ |
– রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী | ৩,৪১৬ |
দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহন | ৮৮,১২৭ |
– ট্রাক, পিকআপ, লরি | ২০,৫৪৯ |
– মোটরসাইকেল | ২০,১২৪ |
– বাস | ১৫,৩০১ |
– নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, ট্রাক্টর | ৮,২১৫ |
– সিএনজিচালিত অটোরিকশা | ৯,০৪৪ |
– ব্যাটারিচালিত রিকশা | ৯,৩১২ |
– রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক | ৫,৫৮২ |
২১ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সড়ক সেক্টরে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নৈরাজ্যের কারণে এত বিপুল সংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী, সংগঠনটির মহাসচিব, বলেন যে, গত ১১ বছরে মোট ২০ হাজার ১২৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে নিহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৫৩ জন। মোট নিহতের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সংখ্যা প্রায় ৩৯.৬৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৫ জনের মধ্যে ৭৫ হাজার ৮৮৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়—যেমন ১৪ হাজার ৯২৮ জন চালক, ১৭ হাজার ১৫০ জন পথচারী, ৮ হাজার ৮০১ জন শিক্ষার্থী এবং ৫৫ জন শিল্পী।
এছাড়া, ১১ বছরে ৮৮ হাজার ১২৭টি যানবাহনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এই সব দুর্ঘটনার ৩১.৭৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৭.৫৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ২২.৫৪ শতাংশ ফিডার রোডে ঘটেছে। ঢাকার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক; সেখানে সড়ক দুর্ঘটনার হার ৫.৪৪ শতাংশ।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরো বলেন, “সড়ক মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সময়ে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা এবং চাঁদাবাজির কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।” তিনি অভিযোগ করেন যে, বিআরটিএর অনেক কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িত এবং তারা সড়কের পরিস্থিতি পরিবর্তনে কিছু করছেন না।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সড়ক পরিবহন খাতের সংস্কার কমিশন গঠন করা হোক।” সড়কের যানজট ও বিশৃঙ্খলা অব্যাহত থাকলে সরকারকে এর খেসারত দিতে হবে।
এ সময়ে আরও বক্তব্য রাখেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সকলেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা কার্যকর না হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা। আশা করা যায়, এসব উদ্যোগের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আমাদের সমাজে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে, যা দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাই, সড়ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জাকির হাসান