জীবনে রিজিকের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা সবাই জানি, রিজিকের অর্থ শুধু খাদ্য নয়, বরং আমাদের জীবন-উপকরণের সবকিছু। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “জমিনে বিচরণকারী যত প্রাণী আছে, সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর।” (সুরা হুদ: আয়াত ৬) এর মানে, আমাদের জীবন চলতে যে সবকিছু প্রয়োজন, তা আল্লাহর কাছে রয়েছে।
রিজিক নিয়ে কোরআনের আয়াত
বান্দার রিজিক বা জীবিকা বাড়ানোর কিছু সহজ উপায় আছে:
১. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত ও সৎকর্ম করা। (সূরা আন নাহল: ৯৭)
২. সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করা ও ইস্তেগফার পড়া। (সূরা নুহ: ১০-১২)
৩. আল্লাহকে ভয় করা। (সূরা আত তালাক: ২)
৪. বৈধ রিজিকের জন্য দোয়া করা। (সূরা বাকারা: ১৮৬)
৫. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। (সূরা আত তালাক: ৩)
৬. দরিদ্রদের সাহায্য করা। (সহিহ বোখারি: ২৮৯৬)
৭. হজ ও উমরা করা। (সুনানে তিরমিজি: ৮১০)
৮. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। (সহিহ বোখারি: ২০৬৭)
৯. সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা। (সুনানে আবু দাউদ: ২৬০৬)
১০. ফজরের নামাজ জামাতে পড়া। (সহিহ মুসলিম: ৬৫৭)
রিজিক থেকে বঞ্চিত হওয়ার একমাত্র কারণ হলো গুনাহ করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯০)
হারাম রিজিক দিয়ে গঠিত শরীরের কোন ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। (সিলসিলা সহিহাহ: ২১২)
অতএব, হতাশার কিছু নেই। আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, আমরা তাই পাবো। আমাদের কাজ হলো চেষ্টা করা, আল্লাহর আদেশ মানা এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকা।
আল্লাহর দয়া ও মানবজাতির জন্য রিজিক
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দেন। (সুরা শুরা: আয়াত ১৯) কিন্তু কেন কিছু মানুষের রিজিক বেশি এবং কিছু মানুষের কম? কোরআনে বলা হয়েছে, যদি আল্লাহ তায়ালা সকল বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তবে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। তাই তিনি তার ইচ্ছা অনুযায়ী রিজিক প্রদান করেন। (সুরা শুরা: আয়াত ২৭)
রিজিকের খোঁজে আমাদের চেষ্টা
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন; সুতরাং তোমরা এর পথে বিচরণ কর এবং তার রিজিক থেকে আহার কর।” (সুরা মুলুক: আয়াত ১৫) এর মানে, রিজিক পেতে হলে আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে।
অনেকে মনে করেন, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু রিজিক প্রদান করেন, তাই বসে থাকার দরকার নেই। কিন্তু কোরআন এবং হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, আমাদের রিজিক অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। কারণ, আল্লাহ রিজিককে আমাদের প্রচেষ্টার সাথে জড়িত করেছেন।
বিভিন্ন উপায়ে রিজিকের সন্ধান
রিজিক বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। কারো রিজিক আকাশে, কেউ ব্যবসা করে, কেউ কৃষি করে, আবার কেউ সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করে। প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ তায়ালা তার উপযুক্ত রিজিক রেখেছেন। আমাদের শুধু তা খুঁজে বের করতে হবে।
চেষ্টা ও ঈমানের সমন্বয়
আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, রিজিকের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রক আল্লাহ। তিনি আমাদের তাকদিরে যা লিখে রেখেছেন, তা পাবোই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পৃথিবীর সব মানুষ মিলে তোমার ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ চান।”
উদাহরণ হিসেবে
একজন সাহাবী যখন রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বললেন, “হুজুর, আমি তো আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমার উট এখানে রেখেছি!” তখন রাসূল (সা.) বললেন, “আগে উট বাঁধবে, তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করবে।” এর মাধ্যমে বোঝা যায়, শুধু ভরসা করলেই হবে না; আমাদেরকে কাজও করতে হবে।
রিজিকের কম-বেশি: পরীক্ষা হিসেবে
আল্লাহ কখনো আমাদের রিজিক কম বা বেশি করেন। এটি একটি পরীক্ষা। কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনও ভয়ভীতি, কখনও অনাহার দিয়ে।” (সুরা বাকারা: ১৫৫) আমাদের উচিত ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।
সঠিক উপায়ে রিজিক অর্জন
রিজিকের জন্য আমাদের আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা উচিত। হারাম উপার্জনের মাধ্যমে কোনো ইবাদত কবুল হবে না। আমাদের চেষ্টা করা উচিত হালাল উপায়ে রিজিক অর্জনের।
রিজিক বৃদ্ধির কিছু আমল
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, তওবা-ইস্তিগফার করা, এবং সৎ কাজ করা রিজিক বৃদ্ধির উপায়। যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি তাদের বলেছি, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।” (সুরা নুহ: ১০)
আমাদের দায়িত্ব
অবশ্যই আমাদের কাজ করা উচিত এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। রিজিকের সন্ধানে আমাদের অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের জন্য যতটুকু রিজিক নির্ধারণ করেছেন, ততটুকু আমরা পাবোই। তাই আমাদের উচিত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, রিজিক আল্লাহর একটি দান। আমাদের উচিত এ দানকে গ্রহণ করার জন্য সঠিকভাবে চেষ্টা করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। জীবনে রিজিকের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দিন।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া