দুর্নীতির মামলায় দণ্ড থেকে মুক্তির আড়াই মাস পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। প্রথমে তিনি লন্ডনে তার ছেলে তারেক রহমানের কাছে যাবেন। তাকে বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, লন্ডনে গিয়ে পরে তাকে একটি ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে’ ভর্তি করা হবে। তিনি বলেন, “ম্যাডামের শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে দ্রুত তাকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”
তিনি আরও জানান, “প্রথমে ম্যাডামকে লন্ডনে নেওয়া হবে। পরে সেখানে থাকার পর, তাকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টার আছে।” চিকিৎসক বলেন, “আমরা আশা করছি, সব কিছু দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং ম্যাডাম দ্রুত বিদেশে যেতে পারবেন।”
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কে কে তার সঙ্গে যাবেন, যেমন চিকিৎসক, নার্স এবং আত্মীয়-স্বজন। তবে কবে নাগাদ তিনি বিদেশ যাবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ। ম্যাডাম গুলশানের বাসায় মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে আছেন এবং তার অবস্থান স্থিতিশীল।”
জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু মেডিকেল সেন্টারে এই অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, তাকে এমন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশে নেওয়া হবে, যাতে সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে চার ঘণ্টার দূরত্বের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে রোগী নিয়ে যাওয়া হয়। তবে লন্ডনে যেতে ১৪ ঘণ্টার দূরপাল্লার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা রয়েছে, এবং চিকিৎসকরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত। এই টিমে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি, লন্ডন থেকে তারেক রহমানের স্ত্রী এবং অন্যান্য বিদেশি চিকিৎসকও রয়েছেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি এবং ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। তাকে ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় তাকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে, উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির পর তার সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে আরও সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়, ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এরপর তিনি গুলশানে ফিরোজায় ফিরে আসেন এবং সেখানেই আছেন।
প্রতি ছয় মাস পর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তবে তার বিদেশ যাওয়ার শর্ত ছিল যে, তাকে বাসায় থাকতে হবে এবং বিদেশ যেতে পারবেন না। শর্ত অনুযায়ী, তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হলেও, তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর, সর্বশেষ ২১ অগাস্ট গুলশানের বাসায় ফেরেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, চিকিৎসা শেষে ছয়দিন পর বাসায় ফিরে আসেন।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া