আমাদের দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে নানা দল এবং সংগঠন নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। জামায়াতে ইসলামী, যার ইতিহাস অনেকটা বিতর্কিত, এখন নতুন করে নিজেদের পুনর্গঠন করতে চাইছে। ঢাকায় আমার অভিজ্ঞতা বলে, সারা রাত ধরে কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে খেতে, সঙ্গীদের সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতে, আমরা কখনও ভাবতে পারিনি যে পরিস্থিতি এত অস্থির হতে পারে।

এইবার যখন আমি ঢাকায় এসেছি, তখন শহীদ তাজউদ্দিন অ্যাভিনিউয়ের একটি হোটেলে দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি আমাদের ওপর নজরদারি করছিলেন। তাঁরা সকাল থেকে রাত অবধি মোবাইল ফোনে মনোনিবেশ করে ছিলেন, যেন আমাদের কোনো পদক্ষেপ নজরে রাখতে চান। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়ে গেছে, এবং সবাই জানে যে জুলাইয়ের পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের দাপটের অভাব লক্ষণীয়। জামায়াতের সদস্যরা এখন আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এবং তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ভারতকে বন্ধু ও সহযোগিতার কথা বলছেন, যা বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন।

জামায়াতের প্রাক্তন সাংসদ হামিদুর রহমান আজাদ আমাকে জানালেন, দেশের ইতিহাসে বহু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চলছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগাচ্ছে।

তিনি আরও বললেন, জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার ফলে তাদের অফিস বন্ধ হয়ে যায়। এবার তারা নিজেদের দাবিগুলো সামনে এনে রাজনীতির মঞ্চে আসতে চাইছে। তারা দাবি করছে, দেশে মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন। নির্বাচন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার করার কথা বলছেন, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।

জামায়াতের দাবি, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে পৃথক করা হোক, যাতে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করা। তারা আরও বলছেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে পাঠ্যপুস্তকে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান দেওয়া উচিত।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই সব দাবির মধ্য দিয়ে জামায়াত যেন নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চায়। রাজনৈতিক দুনিয়ায় জামায়াতের এই নতুন কৌশল কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের রাজনীতি যে যেকোনো মুহূর্তে পরিবর্তনশীল, তা আরও একবার প্রমাণিত হচ্ছে। জামায়াতের নতুন দাবিগুলো কতটা গুরুত্ব পাবে, সেটা সময়ই বলবে। আপাতত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে, তা খেয়াল রাখতে হবে।

রাজনীতি যে সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে, তা আমরা প্রত্যেকেই জানি। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলবে, আর সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল, এই পরিবর্তনগুলো আমাদের জন্য কি সুবিধা নিয়ে আসবে, নাকি আরও অস্থিরতা তৈরি করবে? আমাদের তাই সচেতন থাকতে হবে এবং রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতি নজর রাখতে হবে।