৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এর পর থেকে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তিন মাস ধরে জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে লাখো মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে সরকার এবার এই ১৬ ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে, পটিয়ার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে কোন কোন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান-মেম্বার অনুপস্থিত রয়েছেন। ডিসিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সরকারের পতনের পর ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত। শুধুমাত্র ছনহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপস্থিত রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এসব চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে হত্যার চেষ্টা এবং বিস্ফোরক সম্পর্কিত মামলা অন্তর্ভুক্ত। তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। রাজনৈতিক কারণে কোন প্যানেল চেয়ারম্যানকেও দায়িত্ব নিতে দেখা যাচ্ছে না। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে দেখা গেছে, যারা অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।

বর্তমানে প্রশাসন এসব ইউনিয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রতিনিধিরা নিখোঁজ হওয়ার পর নাগরিকদের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অনুপস্থিতির কারণে নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজে ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৬টি ইউনিয়নের নিবন্ধনের দায়িত্ব ১৬ জন সরকারি কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে, তবে তারা নিজেদের দপ্তরের কাজের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম গত তিন মাস ধরে চলমান রয়েছে, কিন্তু অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ভূঞা জানান, জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাই সরকার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে নাগরিকদের জন্য সেবাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়ছে, কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে। সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।