বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মসলা একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষ করে এলাচ, যা রান্নার স্বাদ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সম্প্রতি এলাচের দাম অনেক বেড়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসুন, আজ আমরা এলাচের বাজার, তার দাম বৃদ্ধি, এবং এর পেছনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করি।

এলাচের বর্তমান বাজারদর

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন এলাচের দাম পাইকারিতে প্রতি কেজি ২,৫০০ থেকে ২,৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে, এক মাস আগে এলাচের দাম ছিল ৩,৩০০-৩,৮০০ টাকা। বিশেষ করে রমজানের ঈদের পর এর দাম ৪,০০০ টাকায়ও উঠেছিল। এলাচের দাম কমছে কারণ বর্তমানে চাহিদা কম এবং বাকিতে বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এক মাসের মধ্যে দাম ৫০০ টাকার বেশি কমেছে।

বাজারের অস্থিরতা

মসলা পণ্যের আমদানিকারক মীর নাসির জানান, বাজারে কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না, যার কারণে নগদ টাকায় খুব অল্প পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতির কারণে গত দুই মাসে অনুষ্ঠান বা রেস্তোরাঁয় ভিড় কমেছে, তাই এলাচের বাজারে মন্দা দেখা গেছে। চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি থাকায় দাম কমছে।

এলাচের চাহিদা ও আমদানি

বাংলাদেশে মসলাপণ্যের বার্ষিক চাহিদা ৮,০০০ টনের কম, কিন্তু গত জুনে খাতুনগঞ্জে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) কেনাবেচার মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার টনেরও বেশি এলাচ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এই বিক্রির পদ্ধতি অনেকটা জুয়া খেলার মতো। ব্যবসায়ীরা ডিও স্লিপের মাধ্যমে এলাচের ব্যবসা করেন, যা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

ডিও স্লিপ মানে হলো, পণ্য বিক্রির বিপরীতে একটি অর্ডার দেওয়া হয়। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হলেও ভোক্তা ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। এভাবে বড় অঙ্কের চুক্তিতে গিয়ে তারা বাজারকে অস্থিতিশীল করে ফেলেছে।

ব্যবসায়ীদের সংকট

এছাড়া, কিছু ব্যবসায়ী প্রায় ৭৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন, যা বাজারে আস্থাহীনতার সৃষ্টি করেছে। নগদ টাকা ছাড়া কেনাবেচা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের জন্য এলাচ কিনতে সমস্যা হচ্ছে।

এলাচের দাম বাড়ার ইতিহাস

২০১৮ সালে গুয়াতেমালায় এলাচ উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বাজারে এলাচের দাম অস্থির হয়ে যায়। তখন এলাচের দাম ১,৫০০-২,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫,০০০ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল। পরে ২০২২ সালে এলাচের আমদানি বৃদ্ধি পায়, যা দেশের বাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথে চলতে থাকে।

আমদানিকারকদের তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ এলাচ গুয়াতেমালা থেকে আসে। চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ১৩টি প্রতিষ্ঠান ২৩৭ টন এলাচ আমদানি করেছে। গত বছর ৮৫টি প্রতিষ্ঠান ৪,৬৭৭ টন এলাচ আমদানি করেছে।

মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব

এদিকে, খাতুনগঞ্জে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছে যারা সরাসরি মসলা ব্যবসায় যুক্ত নয়, কিন্তু তারা ডিও স্লিপ হাতবদল করে এলাচের বাজার অস্থির করে তোলেন। তারা দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অমর কান্তি দাশ বলেন, “মানুষ কিনছে না। চাহিদা কমে যাওয়ায় কম দামে হলেও বিক্রি হচ্ছে।”

বাজারে এলাচের তুলনা

বর্তমানে, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতি কেজি ৯২-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, চীন থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় এবং পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭৪-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, মিয়ানমারের আদা প্রতি কেজি ১৫০ টাকা এবং চীনের আদা ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন (চীন) বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৫ টাকায়।

ক্রেতাদের পরিস্থিতি

খাতুনগঞ্জের বাজারে ক্রেতারা এলাচ কিনতে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন। রামপুরার বাসিন্দা আশরাফুল জানান, আগে ২০ টাকার এলাচ কিনলে ১৫-২০টি পাওয়া যেত। এখন ২০ টাকা দিয়েও এলাচ কিনতে সমস্যা হচ্ছে।

আলেয়া বেগম বলেন, “এত দাম হলে এলাচ কিনে খাবো কীভাবে?” তিনি মনে করেন, ব্যবসায়ীদের উচিত এই বিষয়ে সচেতন হওয়া।