গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এখন তিনি ভারতে রয়েছেন। শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। ভারতের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এক জনসভায় বলেছেন, তিনি জানতে চান, বাংলাদেশ ও বিজেপির মধ্যে কোনো চুক্তি হয়েছে কি না। তিনি প্রশ্ন করেছেন, কী কারণে বাংলাদেশর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া হলো।

হেমন্ত সোরেন আরো বলেন, বিজেপি নিজেরাই বলছে, তাদের শাসিত রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীরা আসছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও নিশানা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র এবং বিজেপি নেতারা বাংলাদেশ সম্পর্কে দ্বৈত ভূমিকা নিচ্ছেন। মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন, তখন তিনি সংবিধানের সামনে মাথা নত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেশের আইন অনুযায়ী সব কিছু হবে এবং সমাজের সব অংশ সমান অধিকার পাবে। সোরেন মোদীকে প্রশ্ন করেন, তিনি কি বাংলাদেশের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যবস্থা করেছেন? কেন হাসিনার হেলিকপ্টার ভারতে নামতে দেওয়া হলো?

ঝাড়খণ্ডে প্রচার করার সময় অমিত শাহ বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে ঢুকে পড়া রোধ করতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকার তা করতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়েই অনুপ্রবেশ বেড়ে চলছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশকারীদের জমি কেড়ে নেওয়া হবে এবং তাদের বিতাড়িত করার জন্য কঠোর আইন করা হবে।

হেমন্ত সোরেন এ বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন। তিনি বলেন, ঝাড়খণ্ডে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সীমান্ত পাহারা দেওয়া এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানো কেন্দ্র সরকারের দায়িত্ব। রাজ্য সরকারের এতে কোনো হাত নেই।

এদিকে, ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। ১৩ এবং ২০ নভেম্বর দু’দফায় ভোটগ্রহণ হবে। গণনা হবে ২৩ নভেম্বর। আসন্ন নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের শরিকেরা জোট বেঁধে লড়বে। জেএমএম কংগ্রেস, আরজেডি এবং সিপিআইএমএল লিবারেশন একসঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেছে। জেএমএম ৪৩ আসনে, কংগ্রেস ৩০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এছাড়া আরজেডি ও সিপিআইএমএল লিবারেশন যথাক্রমে ৬ ও ৪ আসনে লড়বে। তবে ছতরপুর, বিশ্রামপুর এবং ধানওয়ার— এই তিনটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ এবং ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ককে একটি নতুন মোড় দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। জনগণের মনোভাব এবং রাজনৈতিক দলের অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে।

শেখ হাসিনার ভারত সফর এবং সেখানে তাঁর অবস্থান রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। অনেকেই জানতে চান, শেখ হাসিনার উপস্থিতি কি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে এই মুহূর্তটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক পরিবেশ কিভাবে পরিবর্তিত হয়, তা নির্ভর করবে অনেক বিষয়ের ওপর। এই ঘটনায় জনগণের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

ভারতের সরকারের অবস্থানও এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে এবং শেখ হাসিনার আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কীভাবে জনসাধারণকে বোঝাবে, তা দেখার বিষয়।

এখন দেখার বিষয়, সামনের নির্বাচনগুলোতে এই ঘটনা কতটুকু প্রভাব ফেলবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ঘটনা নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং এটি দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের ওপর একটি নতুন প্রশ্নচিহ্ন রেখেছে।