বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হচ্ছে, এবং এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটির কাছে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রস্তাবিত প্রার্থীদের নাম জমা দিচ্ছে। ৬ নভেম্বর, বুধবার, বিএনপি তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে। এই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়, যা সরকারের পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিএনপির প্রস্তাবিত নামের তালিকা

বিএনপির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এই পাঁচজনের নাম সার্চ কমিটিের কাছে জমা দিয়েছেন। দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান কালবেলা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিএনপির প্রস্তাবিত তালিকায় সাবেক বিচারপতি, সাবেক আমলা এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে, দলটি নির্বাচন কমিশনের জন্য এমন ব্যক্তিদের প্রস্তাব করেছে যারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা রাখেন এবং বিচারপ্রতিষ্ঠান বা প্রশাসনে অভিজ্ঞ

নারী প্রার্থীর অন্তর্ভুক্তি

তালিকায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিএনপি একজন নারী প্রার্থীর নামও প্রস্তাব করেছে। নির্বাচনী কমিশনে একজন নারীর অন্তর্ভুক্তি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আজকের দিনে আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। এটি বাংলাদেশের নারী ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, যা রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক দৃশ্যে নারীদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করবে।

১২ দলীয় জোটের প্রস্তাবিত নাম

এদিকে, ১২ দলীয় জোটও একইদিন বিকেলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য তাদের পক্ষ থেকে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে। এই তালিকাও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। জোটের পক্ষ থেকে তালিকা জমা দেন মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা। তারা নিশ্চিত করেছেন যে, জোটও নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য তাদের প্রস্তাবিত নাম সার্চ কমিটির কাছে জমা দিয়েছে।

সার্চ কমিটির গঠন

এদিকে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি গত ৩১ অক্টোবর সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। এই কমিটি ৬ সদস্যবিশিষ্ট, এবং এর আহ্বায়ক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। সার্চ কমিটির কাজ হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের নাম নির্বাচন করা।

নাম প্রস্তাবের সময়সীমা

৩ নভেম্বর, সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে ৭ নভেম্বর এর মধ্যে নাম প্রস্তাব করার জন্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন এবং সাধারণ জনগণকে সময় দেওয়া হয়েছিল। এতে করে রাজনৈতিক দলগুলো, পেশাজীবী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে সক্ষম হয়েছে। সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের পদে সর্বোচ্চ পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করা যাবে।

বিদায়ী নির্বাচন কমিশন

প্রসঙ্গত, ৫ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন বিদায় নিয়েছিল। এই কমিশনের অধীনে ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। নতুন কমিশন গঠনের জন্য এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আগামী নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।

নতুন নির্বাচন কমিশন এবং দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন শুধু একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ও বটে। কারণ, নির্বাচন কমিশনের সঠিকভাবে কাজ করা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সঠিক নির্বাচন কমিশন নির্বাচন একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ, কারণ এটি ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোর নিরপেক্ষতা এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বিএনপি১২ দলীয় জোট তাদের প্রস্তাবিত নাম জমা দিয়ে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সার্চ কমিটি এখন এই নামগুলো যাচাই-বাছাই করবে এবং দেশের জন্য একটি উপযুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এটি দেশের গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে।