আফরোজা হোসেন, বাংলাদেশের ছোট পর্দার এক পরিচিত এবং প্রিয় মুখ, আজ ১০ নভেম্বর ভোর ৬টায় না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার মৃত্যু দেশের শোবিজ অঙ্গনে এক বড় শোকের ছায়া ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মরণব্যাধি ক্যানসারের কাছে হার মানলেন এই অভিনেত্রী।

আফরোজা হোসেনের মৃত্যুর খবর

এ বিষয়ে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি নিশ্চিত করেন অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠু। তিনি আফরোজা হোসেনের সঙ্গে তোলা কিছু পুরনো ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। তার এই শোক বার্তা অনেকের হৃদয়ে গভীর দুঃখের সৃষ্টি করেছে। মিঠু আরও লিখেছেন, “আপা, আমি এখন তিনবেলা ফোনে কার সাথে কথা বলবো? আমাকে কে সাহস দিবে গো? তোমার সন্তান নাঈমকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দিব?”

মনিরা মিঠু, যিনি আফরোজার খুবই কাছের বন্ধু ছিলেন, তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “আমি টাঙ্গাইলে আছি, এমন হতভাগী আমি তোমাকে শেষ বিদায় জানাতে পারলাম না।” আফরোজার এই চলে যাওয়া তার পরিবারের জন্য সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতি।

ক্যানসারের সাথে লড়াই

আফরোজা হোসেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে রোগটি ধীরে ধীরে তার মেরুদণ্ডে এবং হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শেষদিকে কিছুটা সুস্থ বোধ করলেও, ক্যানসারের কাছে তাকে হার মানতে হল। তার এই দীর্ঘ সংগ্রাম সবাইকে প্রভাবিত করেছে এবং তার সাহসিকতার প্রশংসা করা হয়েছে।

আফরোজার ক্যারিয়ার

অভিনেত্রী আফরোজা হোসেন ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির এক গুরুত্বপূর্ণ নাম ছিলেন। তার অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রে নিপুণতার কারণে তিনি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তিনি তার ক্যারিয়ারের শুরুতেই টেলিভিশন নাটক দিয়ে পরিচিতি পান। তার অভিনীত নাটকগুলো ছিল দর্শকদের কাছে বেশ প্রশংসিত। মামুনুর রশীদ এর ‘আনন্দ পাঠ আসর’ নামের নাটকেই তিনি প্রথম অভিনয় করেন।

এরপর তিনি ‘ঠ্যাটারু’ নাটকেও কাজ করেন। এরপর জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ সহ অনেক জনপ্রিয় অভিনেতার সাথে তিনি অভিনয় করেছেন। এছাড়া, ‘আবার বসন্তে’ সিনেমায়ও তাকে দেখা গেছে। ১৯৯০-এর দশকে তার অভিনীত সিনেমাগুলো বিশেষ করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

ব্যক্তিগত জীবন ও শোক

আফরোজা হোসেনের পরিবার ছিল তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তার সন্তান, নাঈম-এর জন্য তার মা ছিলেন জীবনের অমূল্য রত্ন। মৃত্যুর আগে আফরোজা তার পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোগের কাছে তাকে পরাজিত হতে হলো। তার কাছের বন্ধু মনিরা মিঠু শোক প্রকাশ করে লেখেন, “তুমি যাও, আমি আসতেসি গো আপা।”

আফরোজা হোসেনের মৃত্যু পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে এক অপ্রত্যাশিত ধাক্কা। তার অনুপস্থিতি সবার জন্য একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, যা কখনই পূর্ণ হবে না।

আফরোজা হোসেনের অবদান

শোবিজে তার অবদান শুধু অভিনয়ের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক এবং সিনেমায় তার ভূমিকার মাধ্যমে অনেক মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তার অভিনয় ছিল খুবই প্রাকৃতিক এবং মানুষের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলত।

আফরোজা হোসেন ছিলেন একজন দক্ষ অভিনেত্রী, যার চরিত্রে এক ধরনের সাদাসিধে কিন্তু শক্তিশালী প্রভাব ছিল। তার অভিনীত চরিত্রগুলো ছিল মেধাবী এবং অনুভূতির গভীরতা থাকত। সুতরাং, তার মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি বড় শূন্যতা তৈরি করেছে।

শোকের বার্তা

তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণ মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন। টেলিভিশন নাটক ও সিনেমা প্রেমীরা তার অভিনয় দেখতে পছন্দ করতেন, বিশেষ করে ১৯৯০ এর দশকে তার অভিনীত নাটক এবং সিনেমাগুলি খুব জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যু বাংলাদেশী বিনোদন জগতের জন্য এক বড় ক্ষতি।

শেষ কথা

অবশ্যই, আফরোজা হোসেন তার অভিনয়ের মাধ্যমে সবার হৃদয়ে এক আলাদা জায়গা তৈরি করে গেছেন। যদিও তিনি আর আমাদের মাঝে নেই, তার কর্ম এবং অবদান আমাদের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবে। তিনি আমাদের শেখালেন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, এবং তাকে যথাযথভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলেও, তার অভিনয় এবং সাহসিকতার কাহিনী আমাদের অনুপ্রাণিত করবে চিরকাল।