বিজয়ের মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুল হাই কানুককে (বীর প্রতীক) লাঞ্ছিত করার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. এফ বাহাউদ্দিন নাশিম। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা এবং এর সমান্তরালে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাগুলোর ভয়াবহ রাক্ষস ধ্বংসের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত এই অনির্বাচিত ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, রিসেট বোতাম টিপে এবং সূক্ষ্মভাবে নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব ও অহংকারের প্রতীক। এর সাথে সম্পর্কিত সবকিছু মুছে ফেলার পদক্ষেপ নেওয়া। ১৯৭১ সালে শক্তির পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু গত শনিবার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে এটাই প্রথম হামলা নয়, ফ্যাসিবাদী ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা। যে বাড়িটির সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস জড়িত, যে বাড়িটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলার সাহস পায়নি, সেই 32 নম্বর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মূল লক্ষ্য। এই অবৈধ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করতে চায়।
নাশিম আরও বলেন, “কানুরা সাহেব যদি বন্দুক না তুলে ৭ই মার্চের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে প্রতিরোধ শুরু করতেন, ‘প্রতিটি ঘরে একটি দুর্গ গড়ো’ এবং ‘ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তিনি এখনও আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানিদের কেরানি হয়ে থাকবেন।” আমাকে খুশি হতে হয়েছিল। আজ আমরা যে স্বাধীন ভূমি, একটি পতাকা পেয়েছি তা পুরোপুরি আবদুল হাই কানুদের মতো সাহসী যোদ্ধাদের কারণে। যারা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে।’
যারা একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তাদের এ ধরনের অপমান-নির্যাতন স্বাধীন দেশে বরদাস্ত করা যায় না। ব্যক্তি, গোষ্ঠী এমনকি রাষ্ট্রেরও কোনো নাগরিকের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার ক্ষমতা নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো ব্যক্তির মর্যাদা যথাযথভাবে রক্ষা করা। বীর জনাব আব্দুল হাই কানুকে অপমান করে অবৈধ ইউনূস সরকার আবারো প্রমাণ করেছে দেশে আইনের শাসন নেই। গত ৫ আগস্ট থেকে আপনারা দেখেছেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশটি কীভাবে জনতার আড্ডায় পরিণত হয়েছে। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আইন আছে, পুলিশ আছে, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালত আছে। কিন্তু আজ কোনো আইন, আদালত, আইনজীবী নিরাপদ নয়। প্রকাশ্য লুটপাট, ডাকাতি, খুন, আদালত চত্বরে হামলা এখন খুবই নগণ্য। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কথা স্বীকার করছেন পুলিশ প্রধান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে যে প্রতিনিয়ত আঘাত করা হচ্ছে, তাতে বোঝা যায় মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইউনূস সরকার কীভাবে দেখেন। যাদের জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যত মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে।
বিজয়ের এই মাসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হলে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমি কেন এমন বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করলাম? বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অপমানিত। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলার চেষ্টাকারী অবৈধ দখলদার সরকারের বিরুদ্ধে আমি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।