গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় সতর্ক আছে সেনাবাহিনী – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইতে হামলা ও ভাঙচুর প্রতিরোধে সেনাবাহিনী অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়মিত পর্যালোচনা করা হচ্ছে জানিয়ে সেনা সদর দফতরের কর্নেল-স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করা হবে। তদন্ত করেই জানা যাবে আগুন লাগার কারণ। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় মোতায়েন সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অর্থাৎ সচিবালয়ে ভাংচুর বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র। আমরা এখনো বিস্তারিত পাইনি। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সুরক্ষিত করতে সেনাবাহিনী কাজ করছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, সেনাবাহিনী কতদিন মাঠে দায়িত্ব পালন করবে তা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে সেনাবাহিনী। তাই সরকারের সিদ্ধান্তেই সেনা প্রত্যাহার করা হবে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চাপ নেওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তবে সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।

কক্সবাজার এলাকায় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। ওই এলাকায় সেনাবাহিনী সব সময় হাই অ্যালার্টে থাকে। কোনো নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হলে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত সেনাবাহিনী। এছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

ঢাকা সেনানিবাসের বনানী অফিসার্স মেসে আয়োজিত সেনা সদর দফতরের এই ব্রিফিংয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য দেন কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৮ নভেম্বর থেকে সেনাবাহিনী ২৮টি অবৈধ অস্ত্র ও ৪২৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

এ সময়ে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (প্রধানত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৬৭টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও অনুরূপ পরিস্থিতি থেকে সৃষ্ট ১৩ বার প্রধান সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে এবং মালিক-শ্রমিক। কারখানা চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের 2,093টি পোশাক কারখানার একটি ছাড়া বাকি সবগুলো চালু রয়েছে।

শিল্প এলাকা ছাড়াও গত এক মাসে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে। যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ৫টি, সরকারি সংস্থা বা অফিস সংক্রান্ত ৩টি, রাজনৈতিক সংঘাত সংক্রান্ত ৭টি এবং অন্যান্য ধরনের ৩০টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল টঙ্গীতে ১৮ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠের অবস্থানকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের প্রশমন। যেখান থেকে সেনারা পরে ৯২ শিশু ও আহত ৬৬ জনকে উদ্ধার করে। এছাড়া ১৯ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের রূপালী ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় সেনা সদস্যরা পুলিশকে প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রদানের ফলে কোনো ঘটনা ছাড়াই দ্রুত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

গত এক মাসে দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ইয়াবা, ফেনসিডিল, অবৈধ মদসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ১ হাজার ৪০৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত বড়দিনের উৎসব যাতে সারা দেশে নিরাপদে উদযাপন করা যায় তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ধর্মীয় নেতাদের সাথে বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। সারাদেশে মোট 4,241টি গির্জা কোনো ঘটনা ছাড়াই বড়দিন উদযাপন করেছে।

এসব কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সের এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করছে। বাজার জেলা।

কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সেনাবাহিনী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে মোট ৩ হাজার ৫৮৯ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে। যার মধ্যে ৩৬ জন এখনও চিকিৎসাধীন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের পিতা মকবুল হোসেন অসুস্থ হয়ে রংপুর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকা সিএমএইচ এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দেশের ৬২টি জেলায় মাননীয় সেনাপ্রধানের নির্দেশনা অনুসরণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণ। এই সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

  • গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা
  • নিরাপত্তা
  • সতর্ক
  • সেনাবাহিনী
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।