এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রথম সারির ১৪ জন প্রকাশককে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী তিনটি প্রকাশনার প্যাভিলিয়নের আকারও কমানো হয়েছে। বাংলা একাডেমি বইমেলা পরিচালনা কমিটির স্টল বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েও চলছে তুমুল সমালোচনা।
প্রকাশকদের একটি দল বাংলাদেশ বই প্রকাশক বিক্রেতা সমিতিকে ভেঙে দিয়ে জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক ফোরাম এবং বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি নামে দুটি সংগঠনকে সক্রিয় করেছে। ১৭টি প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধে তারা বইমেলা পরিচালনা কমিটির কাছে ক্রমাগত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত ১৭টি প্রকাশনা সংস্থার নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর লেখা বই প্রকাশের অভিযোগে এই প্রকাশকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন এই দুই প্রকাশক সমিতির নেতারা। ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে তারা এখন এই 17 জন প্রকাশককে হয়রানি করতে চায়। বৈষম্য বিরোধী সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির অনেক সদস্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বই প্রকাশ করেছেন।
গত ৯ জানুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলা পরিচালনা কমিটির বৈঠকের পর আসন্ন বইমেলায় ১৪টি প্রকাশনার জন্য প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এবার অনিন্দ্য প্রকাশ, কাকলী প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশনী, পাঠক প্রকাশনী, পূঁথিনীলয়, মিজান পাবলিশার্স, তাম্রলিপি, সময় প্রকাশনী, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, চারুলিপি প্রকাশনী, নালন্দা, বিশ্বসাহিত্য ভবন, পার্ল পাবলিকেশন্স এবং শব্দশৈলীর সব বই মেলায় নেই। এর মধ্যে কিছু প্রকাশনাকে শুধুমাত্র চার ইউনিটের স্টল এবং কিছু তিন ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনুপম, অনাপ্রকাশ এবং আসন্ন প্রকাশনাকে প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের 24/24 সাইজ বরাদ্দ করা হয়েছিল, পরে 20/20 করা হয়েছে। বইমেলায় জার্নিম্যান বুকসকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, বইমেলায় স্টল বরাদ্দের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেক প্রকাশকের স্টল পেতে আপত্তি ছিল। যেসব প্রকাশনার প্যাভিলিয়ন আকারে ছোট করা হয়েছে বা যাদের ইউনিট ছোট করা হয়েছে, সেই প্রকাশকদেরই আপত্তি রয়েছে। স্টল বরাদ্দ উপ-কমিটি সেসব আপত্তি ও অভিযোগ খতিয়ে দেখে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় আগামী প্রকাশনীর নেতা ওসমান গণি বলেন, প্রকাশক পকেটের সংগঠনের কয়েকজন নেতা বাংলা একাডেমিতে গিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন, বাংলা একাডেমিও তা মেনে নিয়েছে। এটা বইমেলা ধ্বংসের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তারা আমাদের আওয়ামী লীগের ট্যাগ দিচ্ছে, আমরা কি আওয়ামী লীগের বাইরে কারও বই প্রকাশ করিনি? তারা কি আওয়ামী লীগের বই প্রকাশ করেনি?
সময় প্রকাশনা নেতা ফরিদ আহমেদ বলেন, আমি আমার কথা বলি। আওয়ামী লীগ সরকারে আমি কখনোই লাভজনক পদে ছিলাম না। আমি বাড়তি কোনো সুবিধা নিইনি। আজকের বইমেলায় উত্তেজনার পেছনে সে সময়ের মানসম্পন্ন বইয়ের ভূমিকা রয়েছে। পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা একদিনে পাওয়া যায় না। কথা হলো, আজ যারা আমাদের নামে বিচার দিয়েছে, তারাই আবার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছে। কিসের ভিত্তিতে বাংলা একাডেমি আমাদের ইউনিট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা চাই।
কাকলী পাবলিকেশন্সের এ কে নাছির আহমেদ, চারুলিপির হুমায়ুন কবির জানান, এই ১৭ জন প্রকাশক একসঙ্গে বইমেলায় অংশ নেবেন। তারা যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত দেবেন।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন ছন্দ পাবলিশিং হাউসের নেতা গফুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই ১৭ জন প্রকাশক দীর্ঘদিন ধরে বইমেলায় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়ে আসছেন। তারা বাংলাদেশ বই প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতিকেও নিয়ন্ত্রণ করত। তাই আমরা তাদের আপত্তি জানিয়েছি।