এনসিটিবি কি কর্তৃত্ববাদের পুনর্বাসনকেন্দ্র, প্রশ্ন টিআইবির – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নিজেকে পতিত কর্তৃত্ববাদের দোসর ও পুনর্বাসনকেন্দ্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ঘটনায় সংস্থাটি গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

টিআইবি বলছে, এনসিটিবির এ সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী সময়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারীদের ওপর ধারাবাহিক হামলা রক্তস্নাত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে সূচিত বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের চেতনা ও প্রত্যাশার সঙ্গে প্রতারণা। এনসিটিবির জবাবদিহিতাসহ এই প্রতিষ্ঠানটিকে কর্তৃত্ববাদের দোসরমুক্ত করে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠীর ‘আদিবাসী’ হিসেবে আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতিসহ সমঅধিকারভিত্তিক মর্যাদার প্রশ্নে সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট করারও আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

প্রসঙ্গত, সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, বাংলাদেশে সহিংসতা, জাতিগত বিদ্বেষ ও ধর্মান্ধতার কোনো স্থান নেই। যারা ঐক্য, শান্তি ও আইনশৃঙ্খলার বিনষ্ট করবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

এদিকে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠির হুমকির প্রেক্ষিতে পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা আদিবাসীসহ সকল বৈচিত্র্যের মানুষের সমঅধিকারের প্রতিফলনমূলক গ্রাফিতি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরিয়ে দিয়েছে এনসিটিবি। এনসিটিবির এ পদক্ষেপকে কর্তৃত্ববাদের এজেন্ডা বহাল রাখার ঘৃণ্য প্রয়াস। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এনসিটিবি প্রমাণ করতে চেয়েছে, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদের পতন হলেও এই সংস্থায় কর্তৃত্ববাদের চর্চার পরিবর্তন হয়নি। বরং যৌক্তিক প্রশ্ন উঠেছে এনসিটিবি কি বাস্তবে পতিত কর্তৃত্ববাদের এজেন্ডা বহাল রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে?

তিনি আরও বলেন, এনসিটিবি এবং যারা ‘আদিবাসী’ হিসেবে ‘আদিবাসী’দের নিজেদেরকে পরিচিত থাকার চিরন্তন আকাঙ্খা ও দাবির বিরোধিতা করছেন; বিশেষ করে সরকারের অজানা থাকার কথা নয়, বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ পরিচয় ব্যবহার করা যাবে না, এমন উদ্ভট তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিল কর্তৃত্ববাদী সরকার। আর এর পেছনে ইন্ধন ছিল এমন স্বার্থান্বেষী মহলের, যারা আদিবাসী অধিকার হরণের জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সমালোচনাকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিশ্ববাসীকে বলতে চেয়েছিল, ‘বাংলাদেশে আদিবাসী নেই।’ তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বীকার করতে চায়নি যে ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের মানদণ্ড কোনো জনগোষ্ঠী কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডে কতকাল যাবত বসবাস করছেন তার ওপর নির্ভর করে না। তারা মানতে চায়নি যে ‘আদিবাসী’ হচ্ছেন মূলধারার সংখ্যাগরিষ্ঠের বাইরে এমন জনগোষ্ঠী, যারা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রথাগত ও প্রাকৃতিক পরিবেশনির্ভর জীবনাচরণের ধারা বহাল রেখে নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচিত থাকতে চায়। ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের উক্ত ব্যাখ্যা যে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত, তা না জানা এনসিটিবির জন্য লজ্জাজনক।

শুধু তা-ই নয়, সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে কোনো প্রকার-বিচার বিবেচনা না করে এক পক্ষের আবদারের দোসর হওয়া পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের প্রতিফলন ছাড়া আর কিছুই না— এমনটা বলছে টিআইবি।

  • এনসিটিবি
  • কর্তৃত্ববাদ
  • টিআইবির
  • পুনর্বাসনকেন্দ্র
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।