হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবারও যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। নরওয়ে থেকে বাংলাদেশে আসা পাঁচ সদস্যের প্রবাসী পরিবারের এক সদস্যকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে লন্ডনগামী এক পরিবারের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটলো। লন্ডনগামী ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে একজনকে মারপিট করা হয়। ভিডিওতে কেন গায়ে তুললেন বলে ভুক্তভোগীকে চিৎকার করতে দেখা যায়। যাত্রী হয়রানির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
বিমানবন্দরে কর্মরত প্রত্যক্ষদর্শীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পাঁচ সদস্যের ওই পরিবারের সদস্যরা টার্কিশ এয়ারলাইন্সযোগে লন্ডন যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। তারা ‘ই’ রো-তে চেকিং করার জন্য আসেন। পরে সেখানে সবজি ভর্তি ব্যাগে অতিরিক্ত ওজনের জন্য এয়ারলাইন্সের স্টাফরা নিষেধ করেন।এ সময় উভয়পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরই মাঝে এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। লন্ডনগামী ওই পরিবারের একজন সদস্যকে টেনে হিঁচড়ে এয়ারলাইন্স স্টাফরা এভসেক সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে অন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে রক্ষা করেন। পরে তারা সবজির ব্যাগটি সেখানে ফেলে দিয়েই ফ্লাইটে উঠে যান।
এদিকে এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গণমাধ্যমে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বিবৃতি পাঠায়। তারা সেই বিবৃতি জানায়, অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিও’র ঘটনাটি ১৩ জানুয়ারির।
বিবৃতিতে এয়ারলাইনস স্টাফদের ভাষ্যমতে দাবি করে বেবিচক জানায়, সেদিনের ফ্লাইটে একই পরিবারের ৫ জন যাত্রী অনেকগুলো লাগেজ নিয়ে ইস্তাম্বুল হয়ে লন্ডন যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে আগমন করেন। পরে রো ‘ই’-তে চেকিং করাকালীন তাদের কাছে থাকা অতিরিক্ত ২৪ কেজি ওজনের একটি লাগেজ যার ভিতরে কাঁচা শাকসবজি বহন করছিলেন, এয়ারলাইনস স্টাফ তা বহন করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু ওই যাত্রীদের মধ্যে একজন তার ক্যাবিন লাগেজে তা বহন করেন যা বিমানে প্রবেশের পূর্বে এয়ারলাইনস স্টাফের নজরে আসে। সেখানে বারণ করা সত্ত্বেও তারা জোর করে বোর্ডিং ব্রিজে প্রবেশের চেষ্টাকালে এয়ারলাইনস স্টাফ তাদের আবারও বাধা দেয় কিন্তু যাত্রীরা তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে ভিডিও করার পাশাপাশি বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। অতপর এয়ারলাইনস স্টাফ শামস্ উদ্দিন তাদের মধ্যে একজন যাত্রীকে ধরে হোল্ডিং লাউঞ্জে নিয়ে আসেন এবং বোর্ডিং ব্রিজ ৯-এর এভসেক সিকিউরিটিতে কর্তব্যরত এএসআই খোকন, এএসজি নজরুল, অপারেটর নুরজাহান ও এলএসি সারোয়ার-কে অবহিত করেন। পরে ওই যাত্রীকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয় এবং যাত্রীর সামনেই সমস্ত সবজি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয় এবং যাত্রী খালি ব্যাগ নিয়ে বিমানে প্রবেশ করেন।
বেবিচক ওই বিবৃতিতে আরও জানায়, এয়ারলাইনস নীতিমালা অনুযায়ী, একজন সম্মানিত যাত্রী সর্বোচ্চ ৭ কেজি ওজনের হ্যান্ড লাগেজ বহন করার অনুমতি পান। তবে, ওই যাত্রী ২৪ কেজি ওজনের হ্যান্ড লাগেজ বহন করায় এয়ারলাইনস স্টাফ বাধা প্রদান করলে যাত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদ হয়।
এদিকে, এর আগে ৮ জানুয়ারি নরওয়ে প্রবাসী ফেনীর সোনাগাজীর সাঈদ উদ্দিনকে তার বাবা গিয়াস উদ্দিনসহ পরিবারের আরও ৩ সদস্যের সামনেই ক্যানোপি গেটে দাঁড়ানো নিয়ে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। ওই ঘটনাও দেশে ও প্রবাসে তোলপাড়ের সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই কর্তব্যরত দুই এভসেক সদস্যকে আবার বিমান বাহিনীতে প্রত্যর্পণ করা হয়। এছাড়াও গত কয়েকমাসে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বিমানবন্দরের সেবার মান ক্ষুণ্ণ করছে।