রফিকুন নবীর কাজে দেশের চিত্র ও সংস্কৃতি ফুটে ওঠে – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



শিল্পী রফিকুন নবী বাস্তবধর্মী কাজ করেন। তাঁর ছবিতে নারী-পুরুষ, শ্রমজীবী মানুষ অর্থাৎ বাংলাদেশেরই চিত্র ও সংস্কৃতি ফুটে ওঠে। তিনি শুধু যে এঁকেছেন তা নয়; দেশের পরিবর্তন আনতে চাইলে রফিকুন নবীর মতো শিল্পকলার চর্চা অপরিহার্য।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে ‘রফিকুন নবীর চিত্রাবলি’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীর আঁকা চিত্র নিয়ে এই বই প্রকাশিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল গ্যালারি চিত্রক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশে সমালোচনার ধারা গড়ে ওঠেনি এবং চিত্র সমালোচনা কম হয়। সেখানে এই বইয়ের জন্য লেখককে তিনি ধন্যবাদ জানান।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই বইয়ে রফিকুন নবীর কাজের একটা চিত্র পাওয়া যায়। তিনি যত মাধ্যমে কাজ করেছেন, সব মাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব এই বইয়ে পাওয়া যায়। তিনি স্বকীয়তা রক্ষা করে গেছেন। তাঁর ছবি প্রাণবন্ত। তাঁর ছবি পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে। এখানে মাতার অনেক ভূমিকা দেখা যায়। এই পিতৃতান্ত্রিকতা শুধু পিতার মধ্যে থাকে না, মাতার মধ্যেও থাকে। সেটা পতিত সরকারের প্রধানের মধ্যে দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, রফিকুন নবীর ছবি দেখলে বোঝা যায় এটা বাংলাদেশের ছবি। এতে দেশের নীরব গান আছে, লোকসংস্কৃতি প্রবহমান।

অভ্যুত্থানের পর দেয়ালের চিত্রের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এতে বোঝা যায় তারুণ্য কীভাবে অবদমিত ছিল। দেয়ালের গায়ে যারা লিখছে বা আঁকছে, তারা দেয়ালকে ভাঙার জন্য এটা করছে। এই দেয়াল বিচ্ছিন্ন করে রাখে, বিষণ্ন করে রাখে, এই দেয়াল মনুষ্যত্বকে খর্ব করছে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি আমরা কোনো পরিবর্তন চাই, তাহলে তা অবশ্যই রাজনৈতিক হতে হবে। কিন্তু সে পরিবর্তনের জন্য যে সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি, যার মধ্যে শিল্পকলার চর্চা অপরিহার্য, সে কাজটা রফিকুন নবী করছেন।’

‘রফিকুন নবীর চিত্রাবলি’ বইয়ের লেখক সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, শিল্পের দিক থেকে রফিকুন নবী অনেক কঠিন। তিনি শিল্পের নানা ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। তাঁর ১৬০টি চিত্র নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনা করা হয়েছে বইতে। শিল্পীর সফলতার বড় মানদণ্ড হচ্ছে তাঁর রসবোধ; যা রফিকুন নবীর মধ্যে আছে। তিনি সুন্দরের সাধক। জয়নুল আবেদিন, শফিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখের বই লেখার অভিজ্ঞতার কথাও বলেন সৈয়দ আজিজুল হক।

এক বইয়ে পুরো রফিকুন নবীকে পাওয়া যায় উল্লেখ করে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, এই বই সংস্কৃতিজগতের জন্য বড় ঘটনা। এ রকম বাংলাদেশে কম দেখা যায়। তিন দশক আগে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রধান শিল্পীদের নিয়ে ছোট আকারে কিছু কাজ হয়েছিল। তা এখন বন্ধ বহুদিন। শিল্পকলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান অতি উৎসাহে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছাপূরণে সময় ও অর্থ ব্যয় করেছে।

মতিউর রহমান আরও বলেন, রফিকুন নবীর ছবি চারপাশকে ভিন্নভাবে দেখতে উৎসাহিত করে। তিনি বহুমুখী কাজ করেছেন। এই বয়সেও নিয়ম করে কাজ করেন। তাঁর কাজে গ্রাম-শহর, নারী-পুরুষ শ্রমজীবী মানুষের প্রতিফলন ঘটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, বইটি বাহুল্যবর্জিত, মেদহীন। যেখানে যে আলোচনা প্রয়োজন, সেখানে ততটুকুই আছে। বাস্তবে রঙের যে অভিজ্ঞতা, তা রফিকুন নবীর চিত্রে পাওয়া যায়। তাঁর চিত্র বাস্তবধর্মী। বইয়ের কিছু অংশ তিনি পড়ে শোনান।

বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক ফখরুল আলম। অনুষ্ঠানে তিনি জানান, বইটি অনুবাদ করে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন।

বইটির সঙ্গে রফিকুন নবী কীভাবে যুক্ত হন, অনুষ্ঠানে সে কথা জানান তিনি। অনেক ছবি এঁকে রেখে দেওয়ার পক্ষে নন জানিয়ে রফিকুন নবী বলেন, ভালো লাগলে ভালো, মন্দ হলে নিজেকে শোধরানোর জায়গা থাকে। ছবি আঁকা শ্রমসাধ্য ব্যাপার। রসবোধ, রুচি দিয়ে বড় ক্যানভাসে কিছু ফুটিয়ে তুলতে হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষকে রফিকুন নবী তুলে ধরেছেন। বইয়ের প্রতিটি চিত্র নিয়ে যে আলোচনা, তা শিক্ষণীয়। এ ধরনের বই অত্যন্ত মূল্যবান। রফিকুন নবী অসাধারণ শিল্পী, তবে জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের মতো সংগঠনভিত্তিক কাজে সময় তিনি দেননি। রফিকুন নবী ভাগ্যবান, এই বয়সে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর বিখ্যাত চরিত্র ‘টোকাই’ কার্টুন থেকে এ বইয়ে পেইন্টিংয়ে উন্নীত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ছায়া কর্মকার রজনীকান্ত সেন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান পরিবেশন করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন গ্যালারি চিত্রকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শিল্পী মো. মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী আফরোজা কনা।

সূত্র : প্রথম আলো

  • চিত্র
  • রফিকুন নবী
  • সংস্কৃতি
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।