অসহায়দের ঠিকানা ‘মিষ্টির আশ্রম’

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

আশ্রমে অসহায়দের সঙ্গে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি। ছবি: বাংলানিউজবিডিহাব।

টাঙ্গাইল: ৩০ বছর বয়সী রাবেয়া দুই মাস আগেও ঘুরে বেড়াতেন রাস্তায়-রাস্তায়। ৩৫ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা রোকসানা হাটে-বাজারে ঘুরতেন। রাবেয়া, রোকসানা, বৃদ্ধ শাহজাহান ও মিনার মত অনেকের ঠিকানা এখন টাঙ্গাইলের আল-মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের আশ্রম। মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামের এক তরুণী এখন যেন অসহায়দের ভরসা। এখানে পশুপাখিদের জন্য আলাদা সেডের ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি।

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে পোড়াবাড়ি রোডে একটি দোতলা ভবনে আল- মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশন। ভাড়া নিয়ে চলছে ওই আশ্রমের কার্যক্রম ও সেবা।

ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন ও প্রতিবন্ধীদের খুঁজে বের করে চিকিৎসা ও আশ্রয় দেওয়া হয় আশ্রমে। এছাড়াও অসুস্থ পশুপাখিদের উদ্ধার করে সেবা-যত্ন আর চিকিৎসাব্যবস্থা করেন ওই তরুণী। তিনি যেন সেবার এক অনন্য উদাহরণ।

ছিন্নমূল প্রতিবন্ধী, মানসিক রোগীদের দেখলেই ছুটে যান মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি। তাদের সন্ধান করেন। খুঁজে এনে আশ্রায় দেন। তাদের সুস্থ্ করে তোলার চেষ্টা করেন। পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেন।

তরুণী মিষ্টি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের টাঙ্গাইলের অন্যতম সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি মানবিক কাজের মাধ্যমেই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।

মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের যশিহাটি গ্রামের মাজহারুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে। তিনি বিবাহিত। টাঙ্গাইল শহরের কাগমারা এলাকায় তার বসবাস। তিনি বাংলাদেশ ইয়োথ টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজ থেকে কৃষি নিয়ে স্নাতক পাস করেন। স্নাতকোত্তরে পড়ালেখা অব্যাহত রেখেই করছেন সেবা।

বাবার আদর্শ, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় মিষ্টি স্কুলজীবন থেকেই সামাজিক ও মানবিক নানা কর্মকাণ্ডে নিজকে জড়ান। এতে সহপাঠী ও আত্মীয়স্বজন সমসময় উৎসাহ দিয়ে আসছেন। বর্তমানে তার আশ্রমে ৩০ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ও প্রতিবন্ধীর আশ্রয় হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জন মহিলা ও ৫ জন পুরুষ আছেন। তাদের খাওয়া চিকিৎসা ও থাকার প্রয়োজনীয় অর্থ বাবা আর মেয়ে ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় করে আসছেন। ওই ৩০ জনকে দেখে রাখতে বেতন দিয়ে ৬ জন কর্মীও রেখেছেন।

২০১৫ সালে ‘আল-মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশন’ সমাজসেবামূলক কার্যক্রম শুরু করে। ২০২১ সালে করোনাকালীন সময় ব্যাপক ভূমিক ছিল ফাউন্ডেশনের। সেবা ও সচেতনতার পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে প্রসংশা অর্জন করেন। প্রতিবছর রোজা ও কোরবানি ঈদে এবং বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে নানান সাহায্য দিয়ে পাশে থাকেন। এছাড়াও হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল, পথশিশুদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আসছেন

বিগত ১০ বছরে এ তরুণী ব্যক্তিগতভাবে বাবার সহযোগিতায় ৩০ লাখ টাকা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন মানবিক সেবায় ব্যয় করেছেন। অনুদান পেয়েছেন মাত্র এক লাখ টাকা

এ আশ্রমের মানসিক ও শারিরিক প্রতিবন্ধীদের সপ্তাহে একদিন টাঙ্গাইল সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশুপাখি অসুস্থ বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বিলুপ্ত প্রজাতির কোনো পশুপাখির সন্ধানা পেলে বন বিভাগে হস্তান্তর করেন মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি।

আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মারইয়াম মুকাদ্দাস মিস্টি বাংলানিউজবিডিহাবকে জানান, মানসিক রোগীদের জন্য আমার জানা মত কোনো আশ্রম নেই। সে ভাবনা থেকে ‘আল-মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের’ যাত্রা শুরু করা। এমন একটি আশ্রম চালানো খুবই কষ্ট সাধ্যের। এটি পরিচালনা করতে প্রচুর অর্থ ব্যায় হয়। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

পোড়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন বলেন, আমাদের চারপাশে প্রায় দেখা যায় কিছু অভুক্ত, দুর্গন্ধে ভরা নোংরা পোশাকে থাকা কিছু মানুষ। পাগল নামেই সমাজে পরিচিত তারা। রোদ-বৃষ্টি, ঝড় কিংবা প্রচন্ত শীতে মানবেতর জীবন তাদের। অযত্নে অবহেলা আর চিকিৎসার অভাবে সুস্থ মানুষের মত জীবনযাপনের সুযোগ পায় না তারা। সেসব মানুষদের পাশে দাঁয়িয়েছেন মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজবিডিহাব কে জানান, আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি সমাজসেবামূলক কাজ দেখে ভালো লাগে। বিশেষ করে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের জন্য আশ্রমটি গড়ে তুলেছেন। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। দ্রুত নিবন্ধন হবে বলে আশা করছি। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আর্থিকভাবে সহয়োগিতা করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

বাংলানিউজবিডিহাব/এসআর

অসহায়দের ঠিকানা
আল-মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশন
আশ্রম
টাঙ্গাইল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।