দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই হয় ক্যান্সারে। প্রতি লাখ মানুষে ১০৬ জন ক্যানসারে আক্রান্ত, যাদের ৯৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর। আর এই রোগের ৩৮ ধরন পাওয়া গেছে। এটি দুই লাখ মানুষের উপর পরিচালিত গবেষণার ফল। শনিবার ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা : জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চালিয়েছে এই গবেষণা।
এ গবেষণার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ক্যানসার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যানসারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। যার কারণে ক্যানসার সঠিক পরিস্থিতি আসলে কতোটা, সেটা নির্ধারণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এ ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল, এজন্যই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দুই লাখ মানুষের উপর এ গবেষণাটি পরিচালিত হয় বলে জানান খালেকুজ্জামান।
তিনি জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যানসার রয়েছে। ক্যানসার রোগীর মধ্যে ২ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু। ৫ দশমিক ১ শতাংশ রোগীর বয়স ৭৫ বছরের বেশি। আর প্রধান পাঁচ ক্যানসার হচ্ছে স্তন ক্যান্সার (১৬ দশমিক ৮ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বরের (৮ দশমিক ৪ শতাংশ), পাকস্থলি এবং স্বরযন্ত্র ক্যানসার (৭ শতাংশ করে) আর জরায়ুমুখ ক্যানসার হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
আবার কেবলমাত্র পুরুষদের প্রধান পাঁচ ক্যানসার হচ্ছে শ্বাসনালী, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যানসার। অপরদিকে নারীদের প্রধান পাঁচটি হচ্ছে স্তন ক্যানসার, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড এবং ওভারি (ডিম্বাশয়)।
গবেষণা বলছে, পুরুষ ক্যান্সার রোগীদের ৭৫ দশমিক আট শতাংশ ধুমপায়ী এবং ধোঁয়াহীন পান, জর্দ্দা, তামাক সেবনকারী ৪০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ৬০ দশমিক ছয় শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন পান, জর্দ্দা, তামাক সেবনকারী।
অধ্যাপক খালেকুজ্জামান জানাচ্ছেন, গবেষণায় দেখা দেখা যাচ্ছে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ’কমবাইন্ড’ চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু সাত দশমিক চার শতাংশ রোগী কোনও চিকিৎসাই নেননি।
দেশে মোট যতমৃত্যু হয় তাদের মধ্যে ১২ শতাংশ মৃত্যু ক্যানসার আক্রান্তদের। আর এই মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যানসার।
গবেষণার তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে ৫৩ জন। তাদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার ও শ্বাসনালীর ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেশি।
ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নাই।যেসব গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে, সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুল আলমও গবেষণার দিকে মনোযোগ দেবার কথা বলেন। তিনি বলেন, গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে- এমন গবেষণার জন্য অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। এই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে।
বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতিকুল হক।