ঝড়ো বৃষ্টিতেও থামেনি পাঠক

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

ঢাকা: বিকেল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। বইমেলার স্টলকর্মী কিংবা দর্শনার্থীরা ভেবেছিলেন গেল মঙ্গলবারের (১৮ ফেব্রুয়ারি) মত ১০ মিনিট স্থায়ী হবে। তাই বেশিরভাগই ছিলেন ভাবলেশহীন। কিন্তু প্রকৃতির ওপর কি কারো হাত আছে? কখন তার মেজাজ-মর্জি পরিবর্তন হয়—বলা যায় না। হলোও তাই। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নামা বৃষ্টি স্থায়ী হলো প্রায় দুই ঘণ্টা।

ঘড়ি কাঁটায় তখন ৫টা ছুঁই ছুঁই। আকাশ থেকে অঝোর ধারায় নামলো বৃষ্টি। সঙ্গে হালকা ঝড়। বসন্তের এ গরম, এ শীত—এমন আবহাওয়ায় কারো আগে থেকে বোঝার উপায় নেই প্রকৃতিতে কখন কী হয়। খুব স্বাভাবিকভাবে দর্শনার্থীদের সঙ্গে ছাতা ছিলো না। বইমেলার সহস্রাধিক স্টলে হুট করে নামা এ অঝোর ধারায় আটকে পরা সকল দর্শনার্থীদের স্থান হলো না। তারা কেউ ছুটলো পাশে থাকা মেট্রো স্টেশনে। আশ্রয় নিলো স্টেশনের সিঁড়িতে। আর যারা পারলো না, তাদের বেশিরভাগই ভিজলো।

আটকে পড়া দশনার্থী। ছবি: শিমুল

কিছু দর্শনার্থীর সঙ্গে অবশ্য ছাতা ছিল। কিন্তু সে ছাতা বৃষ্টি মানছিলো না। তারা চেষ্টা করছিলেন নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে। কিন্তু মেলা প্রাঙ্গনের অধিকাংশ রাস্তা তখন কর্দমাক্ত। দু-একজন যে কাদায় পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে এর মধ্যে রোমান্টিক জুটিরা তো থেমে থাকার নয়। তারা পরস্পরের হাত ধরে মেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। হয়তো তখন গুণগুণ করছিলেন ভালোবাসার কোনো গান কিংবা কবিতা।

স্টলকর্মীরা অবশ্য বৃষ্টি নিয়ে প্রস্তুতি রাখেন সবসময়। বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গেই বইগুলো প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেন—যেন না ভেজে। সারাদিন পাঠক-দর্শনার্থীদের কারণে একটুকুন অবসর পান না বিক্রয়কর্মীরা। একটি স্টলের কর্মীদের দেখা গেল বৃষ্টির সুযোগে সেলফি তুলতে।

বৃষ্টিতে ছিলো না নিরাপত্তা পাহারা। রমনা কালি মন্দিরের পাশের প্রবেশ পথ থেকে তোলা। ছবি: শিমুল

বইমেলায় প্রবেশপথ চারটি। বৃষ্টির মধ্যে এর কোনটিতে ছিলো না কোনো প্রকার নিরাপত্তা পাহারা। পুলিশ, আনসার কিংবা স্বেচ্ছাসেবক সবাই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অন্যত্র গিয়েছিলেন। আর এ সুযোগে মেলায় ঢুকে পরে শতাধিক হকার। যার মধ্যে ছিলো ভাজি-পোড়া বিক্রির ভ্যানও। জানা গেছে, টিএসসির সামনের প্রবেশপথ দিয়ে ওই ভ্যানওলা তার গ্যাস সিলিন্ডার, চুলাসহ মেলায় ঢুকে পরে।

মেলায় ঢুকে ভোজা-পোড়া বিক্রির হকার। ছবি: শিমুল

তবে দুঘণ্টা স্থায়ী বৃষ্টিতে কিছু পাঠকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলো। এ সুযোগে তারা তাদের প্রিয় লেখকের সঙ্গে একটু বেশি সময় ধরে আড্ডা মারার সুযোগ পেয়েছিল। যেমনটা দেখা গিয়েছিলো বাতিঘর প্রকাশনীর স্টলে। লেখক-প্রকাশক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে তরুণ পাঠকরা নানা বিষয়ে আলাপে মেতে উঠেছিল। হাতিরঝিল থেকে আগত নাবিল বলেন, ‘এমনিতে প্রিয় লেখকদের আমরা খুব একটা কাছে পাই না। ফেসবুকে যারা সরব, তার হয়তো মাঝে মধ্যে কমেন্টে আলাপ করেন কিংবা ইনবক্সে। তাতে কি প্রাণ ভরে? বৃষ্টির কারণে নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলার সুযোগ পেলাম। খুবই ভালো লাগছে।’

সন্ধ্যা ৭টা, সোয়া ৭টা নাগাদ বৃষ্টি থামলো। কিন্তু বইমেলা থামলো না। ভিজে চুপ চুপ হয়ে যাওয়া পাঠক বিভিন্ন স্টলে গিয়ে খুঁজছিলেন তার কাঙ্খিত বইটি। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া বাংলানিউজবিডিহাবকে বলেন, ‘এখন অনলাইনের যুগে চাইলে আমার প্রিয় লেখকদের বই বাসায় বসেই কিনতে পারি। কিন্তু স্টলে দাঁড়িয়ে উল্টে পাল্টে দেখে, কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে বই কেনার অনুভূতি অন্যরকম। তাছাড়া মেলায় আসলে অনেক প্রিয় লেখকদের সঙ্গে দেখা যায়। তার একটা লোভ তো রয়েছে। তাই কোনো ঝড়-বৃষ্টিই আমি মনে করি প্রকৃত পাঠকদের থামাতে পারে না।’

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এভাবে প্লাস্টিক দিয়ে পুরো স্টল ঢেকে দেয় ‘বাতিঘর’। ছবি: শিমুল

মওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী নেহাল বলেন, ‘ঝুম বৃষ্টির মধ্যে আমরা ভেবেছিলাম পাঠক বুঝি বই কিনবে না। কিন্তু আমাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে অনেকেই বই কিনেছে।’

বাংলানিউজবিডিহাব/এজেডএস

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।