
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিন নিজেই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। শনিবার (৩ মে) ঢাকাস্থ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউসে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৮৮তম বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে যেসব শিক্ষার্থী মুচলেকা দিয়েছেন, তাদের মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ মুচলেকা দিলে, সেগুলোরও একইভাবে প্রত্যাহার করা হবে।
আলোচনার একপর্যায়ে ক্যানসারে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী জেবুন্নেসা হক জিমির আর্থিক আবেদন উপাচার্যের কাছে না পৌঁছানোর পেছনে কারা দায়ী— তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ কমিটির দায়িত্ব একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দেওয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানান, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের এলপিআর (অবসরপূর্ব ছুটি) গ্রহণ করে তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ পদে নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এজেন্ডাবিহীন সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বাসভবনের গেট ভাঙার চেষ্টা করেন। আন্দোলনের মুখে পরে সভা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হলেও তাতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও একমাত্র অধ্যাপক অংশগ্রহণ করেন।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে। পাশাপাশি, সিন্ডিকেট সভায় অনুপস্থিত থাকায় অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন, যার জেরেও থানায় জিডি করা হয়।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভাঙচুরের ঘটনায় ৪২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় মামলা করা হয়, যেখানে উপাচার্য অধ্যাপক শূচিতা শরমিনকে প্রধান সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৩ এপ্রিল অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীনকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ হিসেবে অভিহিত করে তাকে সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কোষাধ্যক্ষের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় রেজিস্ট্রার পদে উপাচার্যকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ফিরে আসুক, সেটাই চাই। দায়িত্ব শেষে কিছু পাওনার বিষয় ছিল, যা সভায় উপস্থাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কিছুদিন অতিরিক্ত কাজ করেছি— এটি সমাধান করায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়। সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। রেজিস্ট্রার পদে নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করব। অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের স্বপদে বহাল থাকার বিষয়ে আদালতে রিট হয়েছে।