হেফাজতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে : ৬৮ মানবাধিকার সংগঠন – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে কেন্দ্র করে নারীবিদ্বেষী প্রচারণা, নারীর মর্যাদাহানিকর বক্তব্য এবং বর্বরোচিত আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ৬৮টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠন। হেফাজতে ইসলামসহ ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদী দলগুলো নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে বলে মনে করে সংগঠনগুলো। এ বিষয়ে সরকারের নীরবতা আশ্চর্যজনক বলেও মনে করে তারা। রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

একই প্যাডে ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে ৩ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে এবং সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী জাতির প্রতি যে চরম অসম্মানজনক, বর্বরোচিত, ন্যক্কারজনক আচরণ সংঘটিত হয়েছে, যা গোটা নারীসমাজকে স্তম্ভিত করেছে। এ ধরনের বর্বরোচিত আচরণ ও বক্তব্য কোনো সভ্য দেশ ও সমাজের পরিচয় বহন করে না। হেফাজতে ইসলামসহ এ ধরনের নারীবিরোধী, ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদী দল নানা সভা-সমাবেশে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এ ধরনের নারীবিদ্বেষী অসম্মানজনক-অমর্যাদাকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

হেফাজতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে : ৬৮ মানবাধিকার সংগঠন

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শুধু নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নারীবিরোধী গোষ্ঠীগুলো নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাব বাতিল করার দাবির নামে নারীর সমতার অধিকারের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠেছে। ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক সংঘটিত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর প্রতি এত বড় অন্যায়, বর্বরতা ও নৃশংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ দেখা যায়নি, যা সরকারের দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মনে করে, যেকোনো বিষয়ে সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে; কিন্তু সরকার কর্তৃক গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করার মতো অযৌক্তিক দাবি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। হেফাজতে ইসলামের অসাংবিধানিক সব দাবিদাওয়া অগ্রাহ্য করে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্যাডে উল্লিখিত সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্ৰ, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যাক, উইমেন ফর উইমেন, কেয়ার বাংলাদেশ, কর্মজীবী নারী, জাতীয় শ্রমিক জোট, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, আইইডি, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, নিজেরা করি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, অক্সফাম জিবি, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, প্রিপ ট্রাস্ট, এডিডি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন, গণসাক্ষরতা অভিযান, নাগরিক উদ্যোগ, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ, সারি, বাউশি, পাক্ষিক অনন্যা, এসিডি রাজশাহী, ব্ৰতী, নারী মৈত্রী, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, ইকুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, নারী উদ্যোগ কেন্দ্ৰ, জাতীয় নারী শ্রমিক জোট, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় নারী জোট, শক্তি ফাউন্ডেশন, বিপিডব্লিউ ক্লাব, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন, নারী মুক্তি সংসদ, সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, ডিআরআরএ, আমরাই পারি, পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সরেপটেমিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব, ঢাকা, বিস, এডাব, এফপিএবি, ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশ, দলিত নারী ফোরাম, দীপ্ত এ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্লাস্ট, টার্নিং পয়েন্ট, সেন্টার ফর মেন অ্যান্ড ম্যাসকুলিনিটিজ স্টাডিস, সেভ দ্য চিলড্রেন, অভিযান, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, ডিজেবল্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, নারী ঐক্য, পল্লীমা মহিলা পরিষদ ও প্রাগ্রসর।

অন্যদিকে ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন’ বাতিল ও ‘ব্লাসফেমি আইন’ প্রণয়নের দাবি অযৌক্তিক উল্লেখ করে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। দেশের ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় জনগোষ্ঠী ধর্মীয় অজুহাতে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠী ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন’ বাতিল এবং দেশে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে; কমিশন বা এর প্রতিবেদনের যেকোনো বিষয় নিয়ে যে কেউ সমালোচনা করতে পারে, তবে প্রতিবেদন এমনকি কমিশন বাতিল করার দাবি অযৌক্তিক। এ ছাড়া ধর্মীয় অপব্যাখ্যাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি, বলপ্রয়োগ, বিদ্বেষমূলক ভাষা ও আচরণের মাধ্যমে কেউ কোনো অভিমত বা মতাদর্শ কারও ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের নীরবতা আশ্চর্যজনক। এইচআরএফবি সামগ্রিক বিষয়ে সরকারের নীতি ও অবস্থান সুস্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সদস্য ও এক্সপার্ট ড. হামিদা হোসেন, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, শাহীন আনাম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সঞ্জীব দ্রং, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা, খুশী কবির প্রমুখ।

  • নবাধিকার সংগঠন
  • নারীবিদ্বেষী প্রচারণা
  • হেফাজত
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।