
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে মেয়েকে সাঁতার শিখাতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল ৪টায় জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে। তারা হলেন হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটা ব্যবসায়ী বাবুল আহমদ (৬০) ও তার মেয়ে হালিমা মোহাম্মদ (১৮)।
জানা যায়, ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল ব্যবসায়ী বাবুল আহমদের মেয়ে, ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী হালিমা মোহাম্মদ। সেই সুযোগে সাঁতার শিখতে পুকুরে নেমেছিল মেয়ে হালিমা আর সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা বাবুল। একপর্যায়ে মেয়ে ডুবে গেলে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন বাবা। এ সময় দুজনই ডুবে মারা যান। আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় মেয়ে হালিমার অংশগ্রহণের কথা ছিল।
স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা যায়, বাবুল আহমদের স্ত্রী তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তাদের চার সন্তান সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। বাড়ির কাছে মানিকসিংহ এলাকায় বাবুল আহমদের বাব ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে চার-পাঁচ দিন আগে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা বাড়িতে বেড়াতে আসে। তার সন্তানেরা সাঁতার জানে না।
আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে দ্বিতীয় মেয়ে হালিমাকে নিয়ে পুকুরে নেমে প্লাস্টিকের টিউবের সাহায্যে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা বাবুল আহমদ। একপর্যায়ে টিউব থেকে হাত ফসকে হালিমা পানিতে ডুবে যায়। এ সময় বাবুল মেয়েকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু দুজনই পানি থেকে উঠছিলেন না।
খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ছুটে গিয়ে পুকুরে নেমে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পরে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে দুজন মারা যান।
বিকেলে বাবুল আহমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একসঙ্গে বাবা ও মেয়ের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আলাদা দুটি কক্ষে বাবা-মেয়ের লাশ রাখা। লাশের পাশে বসে স্বজনেরা বিলাপ করছেন। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ সময় কথা হল বাবুল আহমদের আত্মীয় ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজাদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, আজ রাত ১০টায় বাবুল ও তার মেয়ের জানাজা হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হবে।
জুড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জহিরুল হক জানান, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় বাবা-মেয়ের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।