লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা: এ পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন লেবুর উপকারিতা এবং অপকারিতা। এছাড়াও জানতে পারবেন লেবুর গুনাগুন। বাঙালি খাবারে এক টুকরো লেবু থাকা উচিত নয়। লেবু যেমন সহজলভ্য, তেমনি এর উপকারিতা অফুরন্ত। প্রতিদিন লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। লেবু ভিটামিন সি এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। এছাড়াও বিভিন্ন গৃহস্থালী সমস্যার দ্রুত সমাধান হিসেবেও লেবু ব্যবহার করা হয়। লেবু সাধারণ সর্দি থেকে শুরু করে ক্যান্সার সবকিছুই প্রতিরোধ করে।

লেবু (সাইট্রাস লেবু) নামটা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ডিম্বাকৃতির হলুদ ফল। যা আমাদের অনেকের কাছেই খুব প্রিয়। কিন্তু এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। আসুন জেনে নিই লেবুর উপকারিতা ও ক্ষতি সম্পর্কে।

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবু একটি সাইট্রাস ফল যা অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এটি ভিটামিন সি, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যাবশ্যক। এখানে নিয়মিত লেবু খাওয়ার কিছু অনন্য উপকারিতা রয়েছে:

হার্টের স্বাস্থ্য: লেবু ভিটামিন সি-এর একটি চমৎকার উৎস, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো বিভিন্ন হৃদরোগের বিরুদ্ধে হার্টকে রক্ষা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: লেবুতে উপস্থিত ফাইবার আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। লেবু জল পান করা আমাদের প্রতিদিনের জলের চাহিদা মেটাতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: লেবু আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভাল কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

হজমের স্বাস্থ্য: লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা আমাদের পেটের পরিবেশ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা এবং বদহজমের মতো বিভিন্ন হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ: লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি উদ্ভিজ্জ উত্স থেকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার শোষণে সহায়তা করে, যার ফলে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ: লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনির পাথর ভেঙ্গে মূত্রনালীর মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে।

ক্ষত নিরাময়: লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি যেকোনো অপারেশন বা কাটা ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমায়: লেবু চা, দারুচিনি, আদা, তেজপাতা এবং লবঙ্গের সাথে মিশিয়ে পান করলে পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: লেবু রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী করে তোলে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত লেবু পানি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

শক্তি বৃদ্ধি: লেবুর জলে উপস্থিত সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে এবং স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ফুসফুসের সুরক্ষা: লেবু শরীরে লিপিড এবং চর্বির মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে, যা সুস্থ ফুসফুসের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।

ক্যান্সার প্রতিরোধ: লেবুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টি বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্য: লেবুর রস মা এবং অনাগত সন্তান উভয়ের জন্যই উপকারী। এটি শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক এবং শরীরের কোষ গঠনে সাহায্য করে।

লিভারের স্বাস্থ্য: লেবুতে উপস্থিত অ্যাসিড আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং লিভারের মাধ্যমে তা বের করে দেয়।

মৌসুমি সমস্যার উপশম: লেবু জল মৌসুমী সর্দি, কাশি এবং জ্বর থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং স্কার্ভি প্রতিরোধ করতে পারে, আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে।

PH ব্যালেন্স রক্ষণাবেক্ষণ: লেবু আমাদের শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, এটি পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইটোকেমিক্যাল সমৃদ্ধ একটি ফল তৈরি করে।

তবে বেশি পরিমাণে লেবু খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া সহ কিছু অসুবিধা হতে পারে। যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের খুব বেশি লেবু খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। ওজন কমানোর জন্য ক্রমাগত লেবুর রস খেলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। লেবুর রস অত্যন্ত অ্যাসিডিক এবং সরাসরি মুখে প্রয়োগ করা উচিত নয়, কারণ এটি ত্বকের পোড়া হতে পারে। লেবু দীর্ঘমেয়াদী সেবন মুখের নরম টিস্যুগুলিরও ক্ষতি করতে পারে।

লেবুর উপকারিতা

  • পিত্তথলির পাথর দূর করে
  • ঠান্ডাজনিত রোগ উপশম করে
  • ক্লান্তি দূর করে
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুর উপকারিতা অনেক ভূমিকা পালন করে
  • হাঁপানি প্রতিরোধে লেবুর উপকারিতা অনেক ভূমিকা পালন করে
  • শরীরে আয়রনের বৃদ্ধি
  • ওজন কমাতে লেবু
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • কিডনি স্টোন
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুর খোসার উপকারিতা
  • কোলেস্টেরল কমায়
  • ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
  • স্ট্রেস কমাতে
  • রক্ত পরিশোধন করে।

লেবুর অপকারিতা

  • অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।
  • লেবু অতিরিক্ত খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবুর শরবত পান করলে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে সাইট্রিক এসিড থেকে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা
  • অতিরিক্ত লেবুর জল পান করার ফলে আমাদের পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমাণ বৃদ্ধি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • আমাদের যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সাধারণত ডাক্তাররা লেবু জাতীয় খাবার না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে।
  • লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিডের কারণে দীর্ঘদিন ধরে  লেবু খাওয়ার ফলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
  • খালি পেটে লেবু খেলে আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য পরিপাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। যার ফলে আমরা যে খাবার টি খেয়ে থাকি তা ঠিক মত হজম হয়না।
  • সাইট্রাস ফলগুলি প্রয়োগ করা আপনার ত্বক রোদে পোড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। সরাসরি সূর্যের আলোতে বাইরে যাওয়ার আগে কখনও লেবু লাগাবেন না ত্বকে।

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা:

  • লেবুতে থাকা ভিটামিন সি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
  • সামান্য গরম পানিতে লেবুর রস হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে এবং লিভারকে সুস্থ রাখে।
  • লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে গোসলের সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। গরমে শরীর ঠান্ডা করবে। এছাড়া এই পাউডার মাথাব্যথা দূর করবে।
  • ব্রণের উপর লেবুর রস লাগালে ব্রণ পরিষ্কার হবে এবং নতুন ব্রণ তৈরি হওয়া রোধ হবে।
  • লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ক্যান্সার কোষ গঠনে বাধা দেয়।
  • লেবু বুকজ্বালা প্রতিরোধ করে এবং আলসার সারাতে সাহায্য করে।
  • লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • শরীর থেকে টক্সিন দূর করে, অন্ত্র, লিভার এবং পুরো শরীর পরিষ্কার করে।
    রক্ত বিশুদ্ধ করে।
  • শ্বাসনালী এবং গলার প্রদাহ নিরাময়ে সাহায্য করে।
  • বাতের রোগীদের জন্য লেবু ভালো।

লেবুর খোসার উপকারিতা

  • লেবুর খোসায় আছে পেকটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ফাইবার এবং মিনারেল।
  • খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এতে পটাসিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে।
  • লেবুর খোসার ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ফাইবার অন্ত্র পরিষ্কার রাখে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফাঁপা প্রতিরোধ করে।
  • লেবুর খোসা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জলপাইয়ের খোসা খুবই কার্যকরী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এটি হাড় সুস্থ রাখে।
  • লেবুর খোসা মুখ বা কনুইয়ের কালো দাগ, বলিরেখা, বার্ধক্যের লক্ষণ দূর করতে সাহায্য করে।

আরো জানুন:

লেবুর পুষ্টিগুণ

ফাইবার৫.৯ গ্রাম
ক্যালসিয়াম৫৫.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ৪৬.৬ IU
ভিটামিন সি১১২ মিলিগ্রাম
আয়রন১.৩ মিলিগ্রাম
ফসফরাস৪০ মিলিগ্রাম
ফোলেট২৩.৩ মিলিগ্রাম
সাইট্রিক অ্যাসিড৪৭ গ্রাম/লিটার
পটাসিয়াম২৯৩ মিলিগ্রাম