দেশে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে : এমএসএফ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



দেশে চলতি জুন মাসে অন্তত ৪১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৪৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গত মে মাসে গণপিটুনির ৩৪টি ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হয়েছিল। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) জুন মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার এ চিত্র উঠে এসেছে। সোমবার মানবাধিকার সংগঠনটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন দিয়ে থাকে সংগঠনটি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ২ জন ডাকাতির অভিযোগে, ৩ জন সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ১ জনকে খুনের অভিযোগে, ২ জনকে চুরির অভিযোগে হত্যা করা হয়। অপরদিকে হত্যার অভিযোগে ১জন, ৫ জন ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে, ৩জন যৌন হয়রানির অভিযোগে, ৪ জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৭ জনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত লীগের নেতাকর্মী হওয়ার অভিযোগে, ৪ জন ডাকাতির অভিযোগে এবং সন্দেহজনক চুরি, চাঁদাবাজি, কটূক্তি, প্রতারণা, অপহরণ এ ধরনের অপরাধজনিত কারণে ১৫ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

এমএসএফ বলছে, আইনের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবজ্ঞা যা দেশে ব্যাপ্তি লাভ করছে—আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার ফলে তাদের উপস্থিতি মব সহিংসতা বা গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন সমাজের উচ্চ শ্রেণি থেকে নিম্ন শ্রেণির জনতা। গণপিটুনির সংখ্যা আশঙ্কাজনক বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তা বোধের বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এছাড়াও ধর্ষণ এবং ধর্ষণ চেষ্টার হার বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষণে অভিযুক্তদের ধরে গণপিটুনি দেওয়ার প্রবণতা প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের পাওয়া মাত্র গণপিটুনি দিয়ে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার লক্ষণীয় প্রভাব থাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড :

এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুলির একটি ঘটনায় ১জন নিহত হয়েছেন। গত ২২ জুন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ৫৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের শান্তিগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে অবৈধ অস্ত্র জব্দ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সন্ত্রাসীরা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে দুর্গম হাওর পথে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার গাদালিয়া গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেনাবাহিনী সদস্যরা গাদালিয়া গ্রামে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে । আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলি বন্ধ হলে আবু সাঈদের লাশ দেখতে পান গ্রামবাসী।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু :

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে থানা হেফাজতে এক নারী ও অপর একজন মধ্যবয়সী পুরুয়ের মৃত্যুর ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। থানা হেফাজতে দুটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই পরিবারের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি অসুস্থতাজনিত কারণে তারা মারা গেছে।

১৩ জুন দিবাগত রাতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকা থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলাকালে ফিরোজা বেগমকে (৫০) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকা সত্ত্বেও আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে,পরদিন সকালে থানা হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আটকের সময়ে একজন নারী পুলিশ সদস্য তাঁকে মারধর করেছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী পরিবারের সদস্যের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

অপরদিকে ১৯ জুন কুমিল্লার মুরাদনগরে উপজেলার বাঙ্গরা গ্রাম এলাকা থেকে ৭০টি ইয়াবাসহ পাঁচ ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বিএনপির সক্রিয় কর্মী শেখ জুয়েলকে (৪৫) থানায় আনার পর শেখ জুয়েল অসুস্থবোধ করলে তাঁকে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

কোস্টগার্ড সদস্য ও জেলেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলি, দুই জেলে নিখোঁজ :

১৭ জুন রাত ৯টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটায় সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে দুটি ট্রলার জব্দ করে ট্রলারে থাকা স্টাফদের মরধর করে এবং চাঁদা দাবি করে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড স্টেশনে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এ ঘটনার জেরে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড স্টেশনের সদস্যরা ও জেলে-স্থানীয় জনতার মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের সময় এই ঘটনা হয়। কোস্টগার্ড সদস্যদের মারধরে ট্রলার থেকে নদীতে পড়ে অন্তত দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।

কারা হেফাজতে মৃত্যু  :

এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে কারা হেফাজতে নারীসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে এর সংখ্যা ছিল ৮। নিহত বন্দিদের মধ্যে একজন আত্মহত্যা করেছেন, অপর এক বন্দি নির্যাতনে মারা গেছেন বলে পরিবারের অভিযোগ। বাকী এ মাসে ১ জন কয়েদি ও ৫ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে রংপুরে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র শিশু-কিশোরীদের শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত :

এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৫টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৪৩৮ জন। তাদের মধ্যে ৮ জন নিহত এবং ৪৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৫ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহতদের মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে ১ জন বৃদ্ধসহ ৬ জন, নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের আঘাতে বিএনপির ১ জন, কথিত বিএনপি-জামাত সংঘর্ষে জামায়াতের ১ জন নিহত হয়েছেন।

সহিংসতার ৪৫ টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দে ৩৪টি, বিএনপি-আওয়ামি লীগের সংঘর্ষে ৩ টি, এনসিপি অন্তর্দ্বন্দে ১টি, বিএনপি-এনসিপি ১টি, বিএনপি-গণিপরিষদের সংঘর্ষে ১টি, বিএনপি-জামাত সংঘর্ষে ৩টি, আওয়ামী লীগের অন্তদ্বন্দে ২টি ঘটনা ঘটেছে।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন :

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসে ১৮টি ঘটনায় ৩২ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, নির্যাতন ও আইনি হয়রানির শিকার হয়েছে। আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ৮ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছিত ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১০ জন, আটক ও মুক্তি পান ২জন সাংবাদিক এবং আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২ জন সাংবাদিক। এছাড়া ও পত্রিকায় খবর প্রকাশ এবং বাক-বিতণ্ডার জেরে ২৫ জুন বাবুল মিয়া নামের একজন ছিনতাইকারীর কিল ও ঘুষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সাংবাদিক শাহ আলম মারা যান।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা :

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন; ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, আত্মহত্যা গত মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও ধারাবাহিকতা রয়েছে, আত্মহত্যা কিছুটা বেড়েছে অপরদিকে হত্যার ঘটনা বেশ বেড়েছে।

সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে ৩৬৩টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ৫টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৬৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৭টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।

সংখ্যালঘু নির্যাতন :

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন ২০২৫ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৭টি ঘটনা হয়েছে। এ সকল ঘটনার মধ্যে রয়েছে ৪টি মন্দির ভাঙচুর, দেবী প্রতিমা বিবস্ত্রকরণ, লুটপপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা । অপর তিনটি ঘটনায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ৪ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

  • এমএসএফ
  • গণপিটুনি
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।