
চাঁদপুরের মতলবে মো. ফরহাদ জুয়েল (২৭) নামের এক যুবক নিখোঁজের ৩৬ ঘণ্টা পর মেঘনা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে জেলার হাইমচরের নীলকমল এলাকায় মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত জুয়েল মতলব উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের সাতানী গ্রামের মো. আবুল হাশেমের ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে ফরহাদ জুয়েল বাড়ি থেকে বের হয়ে এখলাসপুর বকুলতলা এলাকায় যান। পরে আর তিনি ফিরে আসেননি।
নিহতের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে পাশের গ্রামের শাহ আলম মেম্বারের কাছে গিয়েছিল। এরপর আর কোনো খোঁজ মেলেনি।’ তবে এখলাসপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহ আলম দাবি করেন, ‘তার সঙ্গে জুয়েলের কোনো সাক্ষাৎ হয়নি।’
এদিকে ওই দিন রাত ৮টার দিকে হাসিমপুর গ্রামের রুহুল আমিনের সঙ্গে নয়ানগর বটতলায় দেখা হয় জুয়েলের। রুহুল আমিন জানান, জুয়েলের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বাজারের পথে রওনা দেন তিনি। তবে পথিমধ্যে এখলাসপুরের নুরু মিয়া রাজার সঙ্গে দেখা হলে জুয়েল থেমে যান। পরে রুহুল বাজারে পৌঁছালেও জুয়েল আর আসেননি।
নুরু মিয়া রাজা বলেন, ‘জুয়েল বলেছে মনির হোসেন গাজীর ছেলে সজিবের কাছে বালুর টাকা নিতে যাচ্ছে সে।’ অন্যদিকে সজিব বলেন, ‘জুয়েলের সঙ্গে আমার কোনো আর্থিক লেনদেন নেই। এমনকি ওই দিন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।’
তবে নিখোঁজের পরদিন ভোরে পাঁচানী স্কুলের পাশের রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায় জুয়েলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিকে। এর কিছুক্ষণ পরই জুয়েলের বড় ভাই সোহেলের মুঠোফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল দিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পরে দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় সাতানী গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল, জাহিদুল এবং হযরত আলী প্রধানের ছেলে মনির হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
জুয়েলের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, ‘একজন নিরীহ যুবককে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই নির্মমতা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে আমরা কঠোর বিচার চাই।’
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল হক বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দিকটিই আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’