সালিশ না মেনে মামলা, ক্ষিপ্ত মেম্বার-চেয়ারম্যানরা হত্যা করেন মা-ছেলে-মেয়েকে : র‍্যাব – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



মোবাইল চুরির ঘটনায় বোরহান নামের এক তরুণকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছেলেকে বাঁচাতে বোরহানের বাবা রুবির পরিবারের সাহায্য চান। বসে এক গ্রাম্য সালিশ। তবে সেই সালিশে কোনো মীমাংসা হয় না। এরই মধ্য নিখোঁজ হয়ে যান বোরহান। এতে এলাকায় রব পড়ে বোরহানকে হত্যা ও লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে। তখন বোরহানের বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা সংঘবদ্ধ হয়ে মা রুবি ও ছেলে-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ই বাড়ি গ্রামে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ছয়জন হল বায়েজ মাস্টার, মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আউয়াল, আতিকুর রহমান, দুলাল ও আকাশ। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী ও কুমিল্লা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে গ্রেপ্তারকৃতদের মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ। এর আগে দুজনকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

সালিশ না মেনে মামলা, ক্ষিপ্ত মেম্বার-চেয়ারম্যানরা হত্যা করেন মা-ছেলে-মেয়েকে : র‍্যাব

তিনি বলেন, আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়াসহ কয়েকজনের ইন্ধনে এই মব ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী এলাকায় মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে ইস্যু করে এই মব তৈরি করা হয়।

লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ১ জুলাই ওই এলাকার বোরহান নামে এক তরুণ একজন স্কুলশিক্ষকের একটি মোবাইল চুরি করে ধরা পড়েন। এরপর তাকে স্থানীয়রা মারধর করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে বোরহানের পিতা জসীম উক্ত সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তাঁর ছেলের প্রাণভিক্ষা চান। এ নিয়ে মূলত এলাকায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ৩ জুন যে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তাঁদের মধ্যে একজন জোনাকি আক্তার। এই জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের বাড়ি মোবাইল চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত বোরহানের বাড়ির পাশে। বোরহান যখন মোবাইল চুরি করে ধরা পড়েন, তখন তার বাবা জোনাকির পরিবারের কাছে সহযোগিতা চান। যাতে তাঁর ছেলেকে বেশি মারধর না করা হয়। এরপর জোনাকি আক্তার, তাঁর মা রোকসানা আক্তার রুবি ও ভাই রাসেল মিয়া বোরহানকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ১ জুলাই এ নিয়ে সালিস হয়। সালিস করেন মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া। তবে কোনো মীমাংসা ছাড়াই সালিস শেষ হয়। এমনকি বোরহানকেও তাঁর পরিবার আর খুঁজে পাচ্ছিল না। বোরহানের বাবা তখন ধারণা করেন, আসামিরা তাঁর ছেলেকে মেরে লাশ গুম করে ফেলেছে। উল্লেখ্য, বোরহান এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

এ নিয়ে বোরহানের বাবা বাঙ্গরাবাজার থানায় বাচ্চু মেম্বারসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। এতে বাচ্চু মেম্বারসহ আসামিরা ধারণা করেন, জোনাকী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে বোরহানের বাবা থানায় অভিযোগ করেছেন। ২ জুলাই রাতে ওই এলাকায় একটি সভা হয়। ওই সভায় রুবি আক্তারের পরিবারকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে বাচ্চু মেম্বারসহ অন্যরা। ৩ জুলাই সকালে চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও মেম্বার বাচ্চুসহ শতাধিক ব্যক্তি রুবি আক্তারের ওই বাড়িতে যায়। এ সময় রুবি আক্তার ও মেয়ে রোকসানার সঙ্গে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কথা-কাটাকাটি হয়, একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর সেখানে উপস্থিত সবাই হামলা করে। তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করে তারা।

নিহতরা হলেন, রোকসানা আক্তার রুবি, তার মেয়ে জোনাকি আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়া। এই ঘটনায় আরও দুই মেয়ে আহত হন, তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ২ জুলাই মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করে। নিহত রাসেল মিয়াকে ওই রাতেই ফোন করে হুমকি দেয় কয়েকজন। এরপর ৩ জুলাই তাদের হত্যা করা হয়। ঘটনাটি পরিকল্পিত বলেও জানান তিনি।

এর আগে, শুক্রবার দিবাগত রাতে নিহত রোকসানা আক্তারের মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার পর যৌথবাহিনীর অভিযানে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন কড়ই বাড়ি গ্রামের মো. সবির আহমেদ ও মো. নাজিমউদ্দীন বাবুল।

তবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন র‍্যাব ১১ এর অধিনায়ক। মুরাদনগর পুরুষশূন্য হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা নিজেরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা হয়তো আত্মগোপনে চলে গেছেন। কিন্তু যারা জড়িত নয়, তাদের পালিয়ে থাকার কোনো মানে নেই। কোনো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না, হয়রানি করার কোনো প্রশ্নই নেই।

সূত্র : আজকের পত্রিকা

  • মা-ছেলে-মেয়ে
  • র‌্যাব
  • হত্যা
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।