ভাস্কর হামিদুজ্জামানের চিরবিদায় – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান মারা গেছেন। রোববার (২০ জুলাই) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার স্ত্রী চিত্রশিল্পী আইভি জামান।

শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানকে গত ১৫ জুলাই এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার বয়স হয়েছিল ৭৯।

হামিদুজ্জামান খান ভাস্কর্যের পাশাপাশি জলরঙ, তেলরঙ, অ্যাক্রিলিক, স্কেচ মাধ্যমে সমানতালে কাজ করেছেন। ‘জাগ্রতবাংলা’, ‘সংশপ্তক’, ‘বিজয় কেতন’ আর ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, এর মত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বহু ভাস্কর্যের স্রষ্টা তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর ভাস্কর্যে তার প্রিয় বিষয় ছিল পাখি। ঢাকার বুকে ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতের তৈরি বেশ কিছু পাখি তার শিল্পী সত্তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। শুরুতে জলরঙের চিত্রকর্মের জন্য খ্যাতি পেলেও পরে মন দেন ভাস্কর্যে। ১৯৭০ সালে ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা হামিদুজ্জামানকে আটক করলেও পরে তিনি ছাড়া পান।২৭ মার্চ ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় তিনি অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের নৃসংশতা এবং মানুষের অভাবনীয় দুর্দশা তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। সে কারণে স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে তার অধিকাংশ ভাস্কর্যের বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ।

১৯৭২ সালে ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নির্মাণে কাজ করেন। জয়দেবপুর চৌরাস্তায় এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সার কারখানায় ‘জাগ্রতবাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘ফ্রিডম’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ হামিদুজ্জামান খানের অন্যতম বহিরাঙ্গণ ভাস্কর্য।

তবে তার শিল্পী সত্তার আরেক রূপ ধরা দিয়েছে ইস্পাত আর ব্রোঞ্জে গড়া পাখির ভাস্কর্যে। আশির দশকে বঙ্গভবনের প্রবেশপথে ফোয়ারায় স্থাপিত তার ‘পাখি পরিবার’ ভাস্কর্যটি প্রশংসা কুড়ায়। গুলশানের ইউনাইটেড ভবনের প্রবেশপথে তার ‘পাখি’র বিমূর্ত উড়ান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তার ‘শান্তির পাখি’ অন্য এক আকাঙ্ক্ষার কথা বলে।

এক জীবনে হামিদুজ্জামান খান দুইশর মত ভাস্কর্য গড়েছেন। তার একক প্রদর্শনী হয়েছে ৪৭টি। হামিদুজ্জামান খান ২০০৬ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পান। ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন।

  • চিরবিদায়
  • ভাস্কর
  • হামিদুজ্জামান
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।