
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি নিয়ে আরও একটি সুখবর আছে। নতুন শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কাঁচামালে উৎপাদিত পণ্যে বাড়তি ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে না। কোনো পণ্যে মার্কিন কাঁচামালের যতটুকু ব্যবহার ততটুকুতে শুল্কছাড় পাওয়া যাবে। তবে সর্বশেষ শুল্ক কাঠামোর বিষয়টি সুস্পষ্ট করে মাহমুদ হাসান বলেন, নতুন শুল্ক কাঠামো ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে গড়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হত। বর্তমানে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য হয়েছে। এর ফলে শুল্কভার দাঁড়াল ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। যা সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর এই সভাপতি।
তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। দেশটিতে মোট রপ্তানির ৮৮ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। পোশাক উৎপাদনে তুলা প্রধান কাঁচামাল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত পোশাকে শুল্ক আদায় হবে না। তবে কোনো পণ্যে তুলার বাইরে এক্সেসরিজসহ অন্যান্য কাঁচামালের যতটুকু ব্যবহার ততটুকুর ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা নতুন শুল্ক-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা হয়, যদি ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর অতিরিক্ত এই ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে, তা নিয়ে মার্কিন কাস্টমস এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।
প্রধান বাজারে রপ্তানিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের এই ক্লজকে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সুযোগ মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে বাড়তি কিছু শুল্কছাড় পাওয়া যাবে।
কোথায় সুযোগ আছে, সে ব্যাখ্যায় মাহমুদ হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হয়, বাংলাদেশের এ রকম পোশাকের ৭৫ শতাংশই তুলাভিত্তিক পোশাক। তুলার বাইরে ম্যান-মেড ফাইবার বা কৃত্রিম আঁশও সামান্য কিছু আনার সুযোগ আছে। যদিও সেটা খুব বেশি নয়। তবে তুলা আমদানি ব্যাপক হারে বাড়ানোর সুযোগ আছে। কারণ মার্কিন তুলার মান ভালো। দামে কিছুটা বেশি হলেও মানের কারণে সেটা পুষিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা ব্রাজিল এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে তুলা বেশি আমদানি করি। এছাড়া আরও বড় সুবিধা হচ্ছে- তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীন নিজেরাই তুলা উৎপাদন করে। এ কারণে তাদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করার সুযোগ তেমন একটা নেই। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানিতে সময় বেশি লাগার কারণে লিড টাইমে (রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানো) কিছুটা পিছিয়ে পড়তে হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, এ শুল্কছাড় সুবিধা কাজে লাগাতে আমরা কাজ করব। সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিজিএমইএর সদস্য কারখানাগুলোর প্রতি আহ্বান আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। যা প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি এবং কিছু প্রধান প্রতিযোগী যেমন- চীন ও ভারতের তুলনায় কম। চীনের শুল্ক হার এখন ৩০ শতাংশ ও ভারতের ২৫ শতাংশ।
এই শুল্কছাড় সুবিধার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান বিজিএমইএ সভাপতি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। মাহমুদ হাসান বলেন, বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তাদের টিম এই কঠিন আলোচনার সময় যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। তাদের প্রচেষ্টায়ই বাংলাদেশ একটি বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে, যা বিগত প্রায় চার মাস ধরে উদ্বেগের কারণ ছিল।
‘তবে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনও চলমান, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরও কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এনামুল হক খান বাবলু, সহসভাপতি রেজোয়ান সেলিম, সাহেব উদজামান চৌধুরী, মিজানুর রহমান ও অন্যান্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।