
জনকণ্ঠ পত্রিকার ‘নিউজ কার্ডের’ ‘লাল-কালো’ রং নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মামলায় গিয়ে ঠেকেছে। সম্পাদক শামীমা এ খানসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পত্রিকাটির উপপ্রধান প্রতিবেদক ইস্রাফিল ফরাজি। এর আগে জনকণ্ঠের সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে একটি ’সম্পাদকীয় বোর্ড’ গঠন করে পত্রিকাটির একদল কর্মী। তারা পাঁচ দাবি নিয়ে আন্দোলনেও নেমেছেন। এ অংশটি ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে পত্রিকাটিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ রাজু বলেন, শনিবার রাত ১২টার পরে এ মামলা হয়, যেখানে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের ভাইস চেয়ারম্যানকেও আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে এ মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ১৫ জনের নাম রয়েছে। বাকিরা ‘অজ্ঞাত’। মামলার তদন্ত চলছে, কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
আসামির তালিকায় আছেন জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত অতিকুল্লাহ খান মাসুদের স্ত্রী সম্পাদক শামীমা এ খান, তার ছেলে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের ভাইস চেয়ারম্যান জিসাল এ খান, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, সরকারি হিসাবরক্ষক মোস্তাক আহমেদ, সহকারি হিসাবরক্ষক মোশাররফ হোসেন, মানবসম্পদ বিভাগের ফারহানা খান, পত্রিকাটির জেনারেল ম্যানেজার মফিজুর রহমান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজাদ সোলায়মান, আওয়ামী লীগের ‘অনলাইন একটিভিস্ট’ মারুফ হোসাইন, ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াছার আরাফাত, মো. আশিক, মো. ওয়াসিম আকরাম, অমিত দে, যুবলীগের মো. বিশাল খান ও সরদার সানিয়াত হোসেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১ অগাস্ট সকাল ৬টায় জনকণ্ঠ পত্রিকার ফেইসবুক পেইজে আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে ‘নিউজ কার্ডে’ লাল রং থেকে কালো রং করা হয়। এ নিয়ে সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা তৈরি হয় বলে তুলে ধরা হয়।
বাদীর ভাষ্য, ‘বিষয়টি শামীমা খান, তার ছেলে জিসাল এ খান এবং জাকির হোসেনকে জানালে তারা আওয়ালী লীগের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে লাল থেকে কালো রং ধারণ করার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন।’
মামলায় বলা হয়, ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাংবাদিক আজাদ সোলায়মান অফিসে এলে তাকে সমাধানের জন্য বলা হলে তার সঙ্গে থাকা অন্যরা পত্রিকার প্ল্যনিং এডিটর জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ন সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির, সাংবাদিক মীর জসীম, অনলাইন উপদেষ্টা সাবরিনা বিনতে আহমেদসহ অন্যদের ওপর চড়াও হয় এবং হুমকি দেয়। সাবরিনাকে যৌন নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয় মামলায়।
এ ব্যাপারে জনকণ্ঠের সম্পাদক শামীমা এ খান বলেন, লালকে কালো করার কোনো সিদ্ধান্তই ছিল না। এই লাল-কালো নিয়ে যে কথা উঠেছে, সেটা তাদেরই (আন্দোলনকারী অংশ) পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে। এটা পুরো স্যাবোটাজ, এটা না করতে পারলে তারা এ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারত না।অফিসের বাইরে অবস্থান করার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, তারা এখন বাসে করে লোক নিয়ে আসছে। পুলিশ প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করছে না। মামলা হওয়ার বিষয়টি এখনো তিনি জানেন না।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা জনকণ্ঠ পত্রিকার বিভিন্ন হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত ছিল বলে মামলায় বলা রয়েছে। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মালিক পক্ষ সবার সহায়তায় সাইবার স্পেস ব্যবহার করে ছবি ও সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করে জাতিগত বিদ্বেষ ও উদ্বেগ সুষ্টি করে।
এদিকে ‘সম্পাদকীয় বোর্ড সদস্য’ ইস্রাফিল ফরাজির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, মালিকপক্ষের ‘ফ্যাসিবাদী’ বেশ ধারণের প্রতিবাদে আগামী দুই দিন (সোমবার ও মঙ্গলবার) মুদ্রণ সংস্করণে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতিতে ছাপাখানা বন্ধ থাকবে।
পরে রাতে ইস্রাফিল ফরাজি বলেন, কাজ হচ্ছে, সোমবার পত্রিকা বাজারে পাওয়া যাবে। তবে মঙ্গল ও বুধবার বাজারে পাওয়া যাবে না। অনলাইন ও ই- পেপার চালু থাকবে।
এদিকে রাত ১টার দিকে পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণের প্রিন্টার্স লাইনে সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে কারো নাম দেখা যায়নি। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘সম্পাদকমণ্ডলী কর্তৃক গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার-এর সদস্য প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে গ্লোব প্রিন্টার্স লি. ও জনকণ্ঠ লি. থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।’
পত্রিকাটির রোববারের মুদ্রণ সংস্করণের ই-পেপারেও সম্পাদক কিংবা প্রকাশকের নাম নেই। সেখানেও প্রিন্টার্স লাইনে একই কথা লেখা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠার পর এটি এক সময় পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে পরবর্তীতে এটি আওয়ামী লীগপন্থি পত্রিকা হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠে।