‘শ্রীদেবী’ কন্যা হোক বা মায়ের দায়িত্বে, পর্দার নায়িকা হোক বা ব্যক্তিগত জীবনের গল্প যে কোনো পরিস্থিতিতেই তিনি ছিলেন অনবদ্য। বলিউডের ইতিহাসে তিনি ছিলেন সেই একমাত্র নারী যার উপস্থিতি পর্দায় ঝলমল করতো, আর যিনি নিজের আবেগ, প্রতিভা ও মনোহর রূপে দর্শকের মনে চিরস্থায়ী ছাপ রেখেছেন। শ্রীদেবী কেবল একজন অভিনেত্রী ছিলেন না; তিনি ছিলেন এক যুগের সংস্কৃতির প্রতীক।
১৯৬৩ সালের এই দিনে তামিলনাড়ুর ভেনকটেশ্বরপুরামে তার জন্ম। শৈশব থেকেই অভিনয় এবং নৃত্যের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তিনি। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি তামিল চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। তার পারিবারিক পটভূমি এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল তার শিল্পী জীবনের ভিত্তি।
শ্রীদেবীর প্রথম বড় হিট হয় তামিল ও তেলুগু চলচ্চিত্রে। তবে সত্যিকারের খ্যাতি আসে ১৯৭৯ সালে হিন্দি সিনেমা ‘সিতামণি’ এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ‘হমসেফার’, ‘হেমলতা’ ও ‘নজরানা’ এর মাধ্যমে। তার অভিনয়শৈলী ছিল প্রাকৃতিক, আবেগময় এবং দর্শকের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম।
১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে শ্রীদেবী প্রায় প্রতিটি বড় প্রযোজকের কাছেই অপরিহার্য হয়ে ওঠেন। ‘চান্না চা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘চাঁদনী’, ‘হাম’ এবং ‘খিলাদী’ এই সিনেমাগুলোতে তিনি তার ভিন্নধর্মী চরিত্রের মাধ্যমে দর্শকের হৃদয় জয় করেছিলেন। তিনি কেবল নায়িকা ছিলেন না, ছিলেন গল্পের প্রাণ।
শ্রীদেবীর অভিনয়শৈলীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তার প্রাকৃতিকতা। তার চোখের আবেগ, মুখের হাসি, আর নাচের অভিব্যক্তি সব একসঙ্গে মিলিত হয়ে দর্শককে পর্দার সঙ্গে আবদ্ধ করত। তিনি ছিলেন সেই প্রথাগত নায়িকা, যিনি গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে চরিত্রকে প্রাণ দিয়ে তুলতেন।
শ্রীদেবী শুধু অভিনয়েই নয়, স্টাইল ও ফ্যাশনে স্বতন্ত্র ছিলেন। ‘চাঁদনী’ সিনেমায় তার লাল চুন্নি, ‘হমসেফার’ এ তার নীল শাড়ি এই সব চিত্রগুলো আজও অনেকে স্মরণ করে।
২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান চিরসবুজ এই নায়িকা। দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তার কাজ ও স্মৃতি চিরকাল বাঁচবে। তিনি শুধুই একজন নায়িকা না, ছিলেন একজন প্রেরণাদায়ক নারী, যিনি প্রমাণ করেছিলেন যে বলিউডে একজন নারী নায়িকাও পুরো সিনেমার হিরো হতে পারেন।
শ্রীদেবী ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের এক অমোঘ নক্ষত্র। তার উপস্থিতি, অভিনয়, হাসি-সবই আজও আমাদের হৃদয়ে উজ্জ্বল। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, একজন সত্যিকারের নায়িকা কেবল রূপে নয়, হৃদয়ে প্রতিভার দীপ্তিতে চিরকালীন হয়ে থাকতে পারেন। বলিউডের এই চিরন্তন সুপারস্টার চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।