
সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে ৩৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৬৮ জন। এ সময় গণপিটুনিতে ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশকেন্দ্রিক সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকে কেন্দ্র করে এসব রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
এইচআরএসএসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা আগস্টের তুলনায় কিছুটা কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। আগস্ট মাসে ৬৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয়; আহত হন ৫১৪ জন। সেখানে সেপ্টেম্বরে ৩৭টি সহিংসতায় ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ২৪টি সহিংসতায় ৭ জন মারা গেছেন। আর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সাতটি সংঘর্ষে একজন এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন।
এছাড়া সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় ৩০টির বেশি বাড়িঘর, যানবাহন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে দেশে সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল হতাশাজনক। মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) সহিংসতা, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, শ্রমিকদের ওপর হামলা, পাহাড়ে সহিংসতা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর, মাজারে হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আটটি হামলায় ২০টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ঘিরে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এ ঘটনায় সেনা, পুলিশ সদস্যসহ ১৬ জন আহত হন।
সেপ্টেম্বরে ৩২টি ঘটনায় ৪২ জন সাংবাদিক হামলা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দুই সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এতে বলা হয়, এ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে চারজন এবং গুলিতে আরও চারজন নিহত হয়েছেন। শ্রমিক আন্দোলনে সেনা ও পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। কারাগারে মারা গেছেন পাঁচজন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মামলায় সেপ্টেম্বরে অন্তত ৮০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী। যৌথ বাহিনীর অভিযানে আরও ১১ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে কমপক্ষে ১৫৯ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫ জন ধর্ষণ ও ১০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুজন আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জনকে। ১৩২ জন বাংলাভাষীকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এ সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বঙ্গোপসাগর থেকে ৪০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।