২৭ দিন বন্ধ থাকার পর, আজ মঙ্গলবার থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে। এখন থেকে চলবে স্বল্প দূরত্বের মেইল, এক্সপ্রেস, এবং কমিউটার ট্রেন। আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে, এবং এর টিকিট বিক্রি গতকাল বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়েছে।
মালবাহী ট্রেন চলাচলও সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে, রোববার রেলওয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান জানিয়েছিলেন, ২৭ দিন বন্ধ থাকার পর ১৫ আগস্ট থেকে সারাদেশে আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। তবে পারাবত ও জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন আপাতত বন্ধ থাকবে কারণ এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৪০০টি যাত্রীবাহী এবং মালবাহী ট্রেন চলাচল করে, যার মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী, বন্ধন, এবং মিতালি এক্সপ্রেসও অন্তর্ভুক্ত। এই আন্তদেশীয় ট্রেনগুলো ১৮ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া এগুলো আবার চালু করা যাবে না। সারা দেশে ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী চলাচল করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে গত ১৮ জুলাই থেকে বিভিন্ন রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ জুলাই থেকে সরকারের কারফিউ জারির পর পুরোপুরি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১ থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সীমিতভাবে কিছু কমিউটার ট্রেন চলছিল।
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর মন্ত্রীরাও আত্মগোপনে চলে যান, ফলে তিন দিন ধরে কার্যত সরকার ছিল না এবং অফিস-আদালতও বন্ধ ছিল। আন্দোলন ও সরকার পতন ঘিরে সহিংসতার কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
আজ মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়, তবে যাত্রী সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল সোমবার থেকে। লোকাল, কমিউটার, এবং মেইল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে আজ, এবং বৃহস্পতিবার থেকে আন্তঃনগর ট্রেনও চলবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে ট্রেন চলাচল শুরু করার বিষয়ে নির্দেশনা চান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রেলের কোনো সমস্যা না থাকলে পরিকল্পনা করে ট্রেন চলাচল শুরু করা যেতে পারে।” এরপর রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে ধাপে ধাপে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেন।
ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সকাল থেকে নির্ধারিত সময়ে কয়েকটি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে। এসব ট্রেনের মধ্যে বলাকা, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, নারায়ণগঞ্জ কমিউটার, মহুয়া এক্সপ্রেস, তুরাগ, কর্ণফুলী, এবং তিতাস কমিউটার ট্রেন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে ১৮ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্বল্প দূরত্বে মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল, কিছু মালবাহী ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেনও চলছিল। ৪ আগস্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর ২৫ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়, কিন্তু ৩ আগস্ট ফের বন্ধ হয়ে যায়। ২৪ দিন পর আজ ১৩ আগস্ট থেকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হলো।
মেইল, এক্সপ্রেস, লোকাল, এবং কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে এবং রেলওয়ে জানিয়েছে যে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে চলবে। আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হবে ১৫ আগস্ট থেকে। এই ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। পারাবত ও জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
মালবাহী ট্রেন চলাচল সোমবার থেকে শুরু হয়। গত ১১ আগস্ট রেলওয়ের জনসংযোগ পরিচালক মো. নাহিদ হাসান খান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মালবাহী ট্রেন ১২ আগস্ট থেকে, মেইল, এক্সপ্রেস, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন ১৩ আগস্ট থেকে, এবং আন্তঃনগর ট্রেন ১৫ আগস্ট থেকে চলবে। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ১২ আগস্ট বিকাল ৫টা থেকে পাওয়া যাবে।
সবশেষে, ট্রেন চলাচলের পুনরায় শুরু হওয়ার সাথে সাথে রেলওয়ের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করেছে।