বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) “এমপক্স”কে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে, কারণ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গোতে নতুন নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এটির আরো বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ঘোষণা আন্তর্জাতিকভাবে একযোগভাবে কার্যক্রম শুরু করতে সাহায্য করবে, যাতে রোগটি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যেমন টিকা ও পরীক্ষার ব্যবস্থা পাওয়া যায়। তবে, WHO এমপক্সকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেনি। বরং, এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যাতে এটি মহামারি হয়ে না ওঠে।
এমপক্স কি?
এমপক্স (Mpox) হলো একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা মূলত আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি মাঙ্কিপক্স নামেও পরিচিত ছিল। সহজভাবে বললে, এমপক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
এমপক্সের লক্ষণ:
- জ্বর: জ্বর উচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে।
- মাথাব্যথা: মাথায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- গলা ব্যথা: গলার অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে।
- স্ফীত লিম্ফ নোডস: লিম্ফ নোডস ফুলে যেতে পারে।
- পেশী ব্যথা: শরীরের পেশীতে ব্যথা হতে পারে।
- চামড়ায় র্যাশ: মুখ, হাত ও পায়ের ত্বকে দাগ পড়তে পারে।
এমপক্সের দুটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে:
- ক্লেড বা ভ্যারিয়েন্ট I: আফ্রিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের এমপক্স, যা সাধারণত মারাত্মক হতে পারে।
- ক্লেড বা ভ্যারিয়েন্ট II: পশ্চিম আফ্রিকার এমপক্স, যা তুলনামূলকভাবে কম মারাত্মক।
নতুন সতর্কতা কেন?
এমপক্স, যা আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল, একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা (smallpox) গুটিবসন্ত সঙ্গে সম্পর্কিত। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া এবং পেশির ব্যথা। এর পর এটি পূর্ণরুপে প্রকাশ পাই , যা মুখ, হাত ও পা বা সারা শরিলের উপর থাকে।
এমপক্সের ছড়িয়ে পড়া আফ্রিকার কিছু দেশ, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গোতে, আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ACDC) এই সপ্তাহে এমপক্সকে “আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করেছে। এটি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর তাদের প্রথম সতর্কতা।
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গোতে গত এক বছর ধরে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।
মপক্সের দুই ধরনের সংক্রমণ
এমপক্সের দুটি ধরন বা ক্লেড বা ধরন রয়েছে।
ভ্যারিয়েন্ট I, যা মধ্য আফ্রিকা থেকে আসে, মারাত্মক এবং এর মৃৃত্যু হার ১০% পর্যন্ত হতে পারে।
ক্লেড II, যা পশ্চিম আফ্রিকায় পাওয়া জাই , এটি কম মারাত্মক। এর মৃৃত্যু হার ১% পর্যন্ত হতে পারে।
এর তুলনায়, COVID-19 এর ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের মৃৃত্যু হার ০.৭%।
এমপক্সের বিস্তার
এমপক্স কিছু অংশে, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ও পশ্চিম আফ্রিকায়, স্থানীয়ভাবে বিরাজমান। ২০১৭ সাল থেকে এটির মানুষের মধ্যে বিস্তার বেড়েছে, এবং এর কারণ হলো গুটিবসন্ত বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব।
দুই ধরনের মহামারি
২০২২ সালে, মপক্সের ক্লেড II ভার্সন আফ্রিকার বাইরের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মূলত পুরুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর মৃৃত্যু হার কম।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গোতে বড় ধরনের ক্লেড I মহামারি হচ্ছে, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এর কোন টিকা নেই।
বিশ্বব্যাপী বিস্তার
গত এক মাসে, এমপক্স ভাইরাস রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, কেনিয়া ও উগান্ডায় ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে আগে এই রোগের কোনো ঘটনা ছিল না।
ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা
এমপক্স এবং গুটিবসন্ত ভাইরাস সম্পর্কিত হওয়ায়, গুটিবসন্ত টিকা এমপক্স প্রতিরোধে সহায়ক। তবে, বেশিরভাগ মানুষ কখনো টিকা পায়নি এবং এমপক্সের বিরুদ্ধে তাদের কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। নতুন টিকা (যা কিছু দেশে Jynneos বা Imvamune নামে পরিচিত) কার্যকর হলেও, এর সরবরাহ সীমিত।
এখন আমাদের কি হবে?
বিশ্বের যেকোনো গুরুতর মহামারি আমাদের সকলের জন্য উদ্বেগজনক, কারণ এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। WHO’র এই নতুন ঘোষণা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।
যতটা সম্ভব স্থানীয়ভাবে রোগের বিস্তার রোধ করা উচিত, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কার্যকরভাবে তথ্য সংগ্রহ এবং যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
WHO এখন বৈশ্বিক এমপক্স প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করবে, এবং প্রতিরোধ এবং টিকা প্রাপ্তির জন্য ন্যায্যতার ওপর ফোকাস করবে।