মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, আজ পদত্যাগ করেছেন। তিনি ছাড়াও দুদকের দুই কমিশনার, মো. জহুরুল হক এবং মোছা. আছিয়া খাতুনও পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগের খবর সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেছেন মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ নিজেই।

মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি এবং দুই কমিশনার একসঙ্গে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে কেন তারা পদত্যাগ করেছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি শুধু বলেছেন, “কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছি। পরে বিস্তারিত বলব।”

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে। সাধারণত একজন কমিশনার রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের নোটিস দিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পদত্যাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের পদত্যাগের ঘটনা ঘটল গণঅভ্যুত্থানের দুই মাস পরে। গত ৫ আগস্ট, ছাত্র আন্দোলন ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটায় এবং সেই সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের হাওয়া আসে। এর ফলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারাও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ আগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন। ২০২১ সালের ৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি তাকে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। অন্যদিকে, মো. জহুরুল হক একজন সাবেক জেলা জজ এবং আছিয়া খাতুন সরকারের সাবেক সচিব। তাদের তিন বছরের মেয়াদ থাকলেও পরিস্থিতির কারণে তাদের এক বছরের মধ্যে পদত্যাগ করতে হলো।

পদত্যাগের পর দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, “কমিশন আইন অনুযায়ী, নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলবে।” আইন অনুসারে, কমিশনারদের পদত্যাগের পর কমিশনের কার্যক্রম কীভাবে চলবে, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত আছে।

পদত্যাগের আগে, আছিয়া খাতুন কমিশনের অন্যান্য কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা ভালো থাকো।” এ কথা বলার পরই তিনি অফিস ত্যাগ করেন। এ ঘটনার সময়, অফিসের কর্মীরা বুঝতে পারেন যে তারা একসঙ্গে পদত্যাগ করেছেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে, নতুন কমিশন কিভাবে গঠন হবে এবং তাদের কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে এই পরিবর্তনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি দমন কমিশন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, এবং এর চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের ফলে দেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় নতুন পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

যেহেতু তারা পদত্যাগ করেছেন, সেহেতু নতুন কমিশনার এবং চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এটি দেশের দুর্নীতি দমন প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে। জনগণের মধ্যে এই পরিবর্তনের ফলে নতুন আশা দেখা দিতে পারে, এবং এটি নিশ্চিত করবে যে দুর্নীতি দমন কমিশন আরও কার্যকরভাবে কাজ করবে।

এখন সবার নজর থাকবে নতুন কমিশনার এবং চেয়ারম্যানের দিকে, এবং তারা কিভাবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তা দেখার জন্য সকলেই উদগ্রীব। জনগণের প্রত্যাশা, তারা দেশের স্বার্থে কাজ করবেন এবং দুর্নীতি দমনে দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন।

এই পদত্যাগের ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে, এবং সকলের মনে প্রশ্ন রয়েছে—এখন বাংলাদেশের প্রশাসনে নতুন পরিবর্তন আসবে কি না।