মুখে ব্রণ একটি সাধারণ সমস্যা যা শুধু বয়ঃসন্ধির সময়েই নয়, বিভিন্ন বয়সে এবং বিভিন্ন ত্বকের ধরনে দেখা দিতে পারে। এটি শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। তবে সঠিক যত্ন ও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আসুন জেনে নেয়া যাক ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় এবং কিভাবে কিছু সাধারণ ভুল এড়িয়ে চলা যায়।
মুখে ব্রণ হলে কী করবেন:
১. ত্বক পরিষ্কার রাখুন: ব্রণ হওয়ার সময় ত্বক দিনে অন্তত দুইবার পরিষ্কার করা উচিত। এতে ত্বকের ছিদ্রগুলি মুক্ত থাকে এবং অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর হয়। এজন্য, মৃদু ও প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত ক্লিনজিং লোশন ব্যবহার করুন।
২. সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন: ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য হালকা ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন যা ত্বককে আঠালো না করে হাইড্রেটেড রাখে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
৩. সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: সূর্যের রশ্মি ত্বকের অবস্থার আরও অবনতি করতে পারে। তাই ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, বিশেষ করে জেল-ভিত্তিক সানস্ক্রিন যা খুব লাইটওয়েট হয়।
৪. মেকআপ ব্যবহার কমান: ব্রণ থাকলে মেকআপ ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি মেকআপ ব্যবহার করতে হয়, তবে নিয়মিত মেকআপ ব্রাশ এবং স্পঞ্জ পরিষ্কার করুন এবং রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ পুরোপুরি মুছে ফেলুন।
৫. হাতের নখ ছোট রাখুন: হাতের নখ বড় থাকলে ব্রণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই হাতের নখ সব সময় ছোট রাখুন।
৬. মুলতানি মাটি ও চন্দনের ফেসপ্যাক: ব্রণের ওপর মুলতানি মাটি, চন্দন ও গোলাপ জল মিশিয়ে ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা কমে।
মুখে ব্রণ হলে কী করবেন না:
১. লেবুর রস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন: লেবুর রস ব্রণপ্রবণ ত্বকে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। লেবুর রস ত্বককে জ্বালিয়ে ফেলতে পারে, তাই এটি ব্রণ থেকে সুরক্ষায় ব্যবহার করা উচিত নয়।
২. টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন না: টুথপেস্ট ব্রণর জন্য উপকারী নয়, বরং এটি ত্বককে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং কালো দাগ সৃষ্টি করতে পারে।
৩. ভিটামিন ক্যাপসুলের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: ব্রণের সমস্যার ক্ষেত্রে ভিটামিন ক্যাপসুলের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।
৪. ব্রণ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন: ব্রণ স্পর্শ করলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং নতুন ব্রণ তৈরিতে সহায়তা করে।
মুখে ব্রণ হওয়ার কারণ:
ব্রণ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ধারণ করা কঠিন, তবে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে হরমোনাল পরিবর্তন, অতিরিক্ত তেল উৎপাদন, জিনগত কারণ, এবং সংক্রমণ। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে এই সমস্যা প্রকট হয়।
মুখের ব্রণের প্রকারভেদ:
১. ট্রপিক্যাল একনি: গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পিঠে ও ঊরুতে বেশি দেখা যায়।
২. প্রিমেন্সট্রুয়াল একনি: নারীদের মাসিকের আগে ব্রণ হয়ে থাকে।
৩. একনি কসমেটিকা: প্রসাধনীর দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারে ব্রণ হতে পারে।
৪. একনি ডিটারজিনেকস: অতিরিক্ত সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহারে ব্রণ বাড়তে পারে।
৫. স্টেরয়েড একনি: স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহারে দেখা যায়।
মুখে ব্রণ কমানোর কিছু প্রাকৃতিক উপায়:
১. কোল্ড কমপ্রেস: বরফের টুকরা ব্রণের প্রদাহ কমায় ও ব্যথা লাঘব করে।
২. নিম তেল: ব্রণ কমাতে নিম তেল কার্যকরী। এটি ব্যাকটেরিয়া নাশ করে এবং ব্রণ শুকায়।
৩. অ্যালো ভেরা: অ্যালো ভেরা জেল ত্বককে শান্ত করে এবং প্রদাহ কমায়।
৪. হলুদ: হলুদ ব্রণ কমাতে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৫. টি ট্রি অয়েল: এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং ব্রণ কমায়।
ব্রণ সমস্যা খুবই সাধারণ হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক যত্ন ও কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি ব্রণের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ব্রণ কমাতে প্রাকৃতিক উপায় ও নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অনুসরণ করুন।