ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ বাংলাদেশকে বকেয়া পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে। বিশেষ করে, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নেওয়া ঋণের দ্রুত পরিশোধের জন্য আবেদন করেছে। এ বিষয়ে ভারতের মানিকন্ট্রোল সংবাদমাধ্যমে ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
আদানি গ্রুপের আবেদন
আদানি গ্রুপের এক প্রতিনিধি জানান, গ্রুপটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বকেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে। বাংলাদেশের সরকারকে আদানি গ্রুপ জানিয়েছে যে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে তারা ঋণদাতাদের ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন। বিলম্বের কারণে অর্জিত সুদসহ ঋণ পরিশোধের আশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তবে আদানি গ্রুপের মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারেননি।
গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং চুক্তি
ঝারখণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একটি চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায়, আদানি গ্রুপ প্রতি মাসে বাংলাদেশকে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে থাকে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ২৫ বছরের একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই হয়।
বর্তমানে, বাংলাদেশের কাছে আদানি গ্রুপের বকেয়া পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি অর্থে, এটি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সমান। এই বিলম্বিত পরিশোধের কারণে আদানি গ্রুপের ঋণদাতাদের চাপ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
গত ২৩ আগস্ট, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২০.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই রিজার্ভের মাধ্যমে মাত্র তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এর ফলে, আদানি গ্রুপের বকেয়া পরিশোধে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ভারতের বিদ্যুৎ নীতি পরিবর্তন
বাংলাদেশ যদি আদানির বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভারতের সরকার তাদের বিদ্যুৎ নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। নতুন নীতির আওতায়, শুধুমাত্র বিদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো স্থানীয় বাজারেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও, আদানি গ্রুপ নিশ্চিত করেছে যে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বকেয়া অর্থ দ্রুত পরিশোধের জন্য তাগিদ দিয়েছে।
বিদ্যুৎ চাহিদা এবং বিনিয়োগ
২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী, গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেবে, যা দেশের মোট চাহিদার ১০ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার পর, কেন্দ্রটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এছাড়া, আদানির ভোজ্যতেল পরিশোধনাগার এবং চাল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্টও বাংলাদেশে অবস্থিত।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় আইএমএফ থেকে আরও ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে, ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। তবে, বকেয়া পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করা সহজ হচ্ছে না।
সমাপনী মন্তব্য
আদানি গ্রুপের দাবি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে দ্রুত বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ করেছে। একদিকে যেখানে বিদ্যুৎ চাহিদা ও আন্তর্জাতিক ঋণের চাপ রয়েছে, অন্যদিকে আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ জরুরি হয়ে পড়েছে।