আলুর দাম এখন আবেগী এবং অস্থির হয়ে পড়েছে। বর্তমানে, দেশের বেশিরভাগ বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৭০ টাকা ছাড়িয়েছে, কিছু কিছু বাজারে ৭৫ থেকে ৮০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা, কিন্তু হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে। খুচরা বাজার থেকে পাইকারি বাজার—সব জায়গায় আলুর দাম বাড়ছে এবং কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না, এই অস্থিরতার শেষ কোথায়।
দাম বৃদ্ধির কারণ
এখন, অনেক বাজারেই প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে আলুর কেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ৫ টাকার মতো কম ছিল। অর্থাৎ, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়ে গেছে।
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে পাইকারি দামে প্রতি কেজি আলু ৬২-৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৫৮-৬০ টাকা। এর মানে হলো, পাইকারি দামে ৪-৫ টাকারও দাম বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো আলুর মৌসুমের শেষ হয়ে আসা এবং আলুর সংকট।
মৌসুমের শেষ এবং সংকটের প্রভাব
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম বলেন, “এ সময় প্রতি বছরই আলুর দাম বাড়ে। তবে এ বছর দাম প্রথম থেকেই বেশ চড়া ছিল। এখন দাম আরও বেড়েছে, এবং ভবিষ্যতে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম এই রকমই থাকবে।” তিনি আরও বলেন, যে কারণে দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হল, আলু মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। আর নতুন আলু বাজারে আসতে কিছু সময় লাগবে, ততদিন পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া আলুর আড়তদার মো. সবুজ জানাচ্ছেন, “গত সোমবার আমি ৫৮ টাকা কেজি দামে পুরোনো আলু বিক্রি করেছি। তবে তার আগের সপ্তাহে এই আলু বিক্রি হয়েছিল ৪৭-৪৮ টাকায়।” তার মতে, আলুর সংকট বর্তমানে প্রকট হয়ে উঠেছে, এবং বিভিন্ন অঞ্চলে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর—এই সব জায়গাতেই আলুর সংকট চলছে।
অতিবৃষ্টি এবং আলু চাষের ক্ষতি
আলুর দাম বৃদ্ধির পিছনে আরেকটি বড় কারণ হলো গত বছর দেশের অনেক অঞ্চলে অতি বৃষ্টি এবং ঢল হওয়ার কারণে আলুর বীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন কম হয়েছে, এবং আলুর সরবরাহেও বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি বছরে কয়েকবার ঘটে, তবে এবার এটি আরো গুরুতর আকার নিয়েছে।
তাছাড়া, আলু চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় এবং বীজের নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পুরো বছরের জন্য বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, আলু ব্যবসায়ীদের জন্য বিষয়টি কঠিন হয়ে উঠেছে, এবং খুচরা বিক্রেতারা কোনোভাবেই তাদের ব্যবসায় স্থিতিশীলতা আনতে পারছেন না।
বাজারে ভবিষ্যত পরিস্থিতি
বর্তমানে আলু বাজার একেবারে অস্থির হয়ে উঠেছে, এবং দামের এমন উত্থান-পতন সাধারণ মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে, যারা আলু খুচরা কিনে থাকে, তাদের জন্য এটি একটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ী ও পাইকারি বিক্রেতারা আশা করছেন, নতুন আলু আসা শুরু না হওয়া পর্যন্ত দাম কিছুটা স্থিতিশীল হবে না। তবে, আলুর সংকট কবে দূর হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
এছাড়া, বিক্রেতারা আরও জানাচ্ছেন, এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অন্য পণ্যগুলির দামও বাড়বে, এবং পুরো খাদ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির জন্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বর্তমানে আলুর বাজার এতটাই অস্থিতিশীল যে, বিক্রেতা ও ক্রেতা—দুই পক্ষই এতে চাপের মধ্যে রয়েছে। আলু মৌসুম শেষ হওয়ার ফলে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, এবং আলুর সংকট আগামী কিছু দিন আরও অব্যাহত থাকতে পারে। তবে নতুন আলু বাজারে আসার পরই দাম কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। ইতিমধ্যে, দামের এই উত্থান-পতন বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ব্যয়ের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, এবং তা শীঘ্রই নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া