অমর একুশে বইমেলা, যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অঙ্গ, ২০২৫ সালে কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। গত ১৩ নভেম্বর সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান না হয়ে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একটি বৈঠকের পর, যেখানে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বাংলা একাডেমিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে যে, ২০২৫ সালের বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হতে হবে। এই সিদ্ধান্তে কিছুটা অবাক হলেও, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুকী জানিয়েছেন যে, তারা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন এবং আশা করা যায় যে, বইমেলা আগের মতোই সুন্দরভাবে আয়োজন করা হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থানান্তরের কারণ
এ বিষয়ে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, “আমরা এই বিষয় নিয়ে কাজ করছিলাম এবং গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) পত্রিকায় বিষয়টি সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার আগেই, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।” তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের পেছনে তিনটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা রয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে একাধিক আলোচনা হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এতে যুক্ত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত যে, এই স্থানান্তর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না এবং বইমেলা যথাসময়ে সুন্দরভাবে হবে।”
বইমেলা নিয়ে অনেক শঙ্কা
গত ৬ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেওয়া হয়, যাতে বলা হয় যে, ২০২৫ সালের অমর একুশে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত হবে।
এই চিঠি পাওয়ার পর বইমেলা নিয়ে অনেক প্রকাশক ও পাঠক ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কারণ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য যে পরিমাণ জায়গা ও পরিবেশ ছিল, তা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কিছুটা কম হতে পারে।
এর ফলে, অনেক প্রকাশক ও বইমেলা নিয়ে আগ্রহী মানুষ কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন। তবে ফারুকী স্যার আশ্বস্ত করেছেন যে, তারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করছেন এবং আশা করা যায় যে, এই পরিবর্তন কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এই বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্তকে তারা সমর্থন জানিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ফারুকী জানান, “মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এর মধ্যে রয়েছেন এবং তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন যাতে সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।”
পজিটিভ আউটকাম নিয়ে আশাবাদী
উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আমরা আশা করছি যে, এই সিদ্ধান্তের পর বইমেলা সফলভাবে আয়োজন করা সম্ভব হবে এবং আগের মতোই সবার ভালো লাগবে।” তিনি আরও জানান, তিনটি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তারা পজিটিভ আউটকামের দিকে যাচ্ছেন, এবং এই পরিবর্তন কোনো ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি করবে না। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, বইমেলা যে স্থানেই হোক, সেগুলোর প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই চলছে এবং খুব শিগগিরই এটি সবার কাছে সুসংবাদ হিসেবে আসবে।
বইমেলা ২০২৫ নিয়ে প্রতিক্রিয়া
প্রকাশক, পাঠক এবং সাধারণ মানুষ বইমেলা ২০২৫ কোথায় হবে, তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো বড় জায়গা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে কিছু লোক মনে করেন যে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ অনেক বেশি সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং সেখানে বইমেলা আয়োজন করলে এটি আরও গুরুত্ব পাবে। সবার আশা, এই স্থানান্তর কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না করে, বইমেলা সুন্দরভাবে আয়োজিত হবে।
এছাড়া, অনেক পাঠক মনে করেন, বইমেলা তাদের কাছে কেবল একটি বই কেনার জায়গা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা যেখানে প্রতিটি প্রজন্মের মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করা যায়, বিভিন্ন লেখকদের সাথে কথা বলা যায় এবং নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। তাই, সবার আগ্রহ বইমেলার স্থান পরিবর্তনের পরিবর্তে, এর আয়োজনের গুণগত মানে এবং এটি কীভাবে আরও সবার কাছে উপভোগ্য করা যায় তা নিয়ে।
নতুন সিদ্ধান্তে ভবিষ্যত কী?
বইমেলা ২০২৫ যেখানে হবে, তা নিয়ে মানুষের মনে কিছু শঙ্কা থাকলেও, ফারুকী স্যার আশ্বস্ত করেছেন যে, নতুন জায়গা না হলেও বইমেলা আগের মতোই সবার কাছে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় হয়ে থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্তটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, তিনটি মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে, এবং আশা করা যায় যে, সবাই এই নতুন পরিবেশে উপভোগ করতে পারবে।
পরিশেষে, অমর একুশে বইমেলা একটি বড় আয়োজন, যা বছরের পর বছর ধরে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থান পরিবর্তন হলেও, এটি আমাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সম হয়ে থাকবে, যেখানে আমাদের ভালোবাসা, সংস্কৃতি এবং বইয়ের প্রতি আগ্রহ প্রতিফলিত হবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জাকির হাসান