ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির ভাই অনিল আম্বানির নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে বড় একটি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI)। SEBI গত সপ্তাহে অনিল আম্বানিসহ ২৫ ব্যবসায়ীকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার জরিমানা আরোপ করেছে।
অভিযোগ ও প্রমাণ
SEBI’য়ের তদন্তে দেখা গেছে যে অনিল আম্বানির নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্স (RHFL) তহবিলের একটি বড় অংশ SEBI অনুমদন দেইনি এমন ব্যবসায় সরিয়ে নিয়েছে। এ অভিযোগে SEBI রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্সকে পাঁচ বছরের জন্য শেয়ারবাজার থেকে নিষিদ্ধ করেছে এবং ২৫ কোটি রুপি জরিমানা করেছে। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা এবং জরিমানা
অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে SEBI’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি আগামী পাঁচ বছর কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনায় বা অন্যান্য কোনো পদের জন্য বিবেচিত হবেন না। তাঁর কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যে অমিত বাপনা, রবীন্দ্র সুধালকার ও পিঙ্কেশ আর শাহও শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাঁরা শেয়ার কেনাবেচা বা অন্য কোনো লেনদেন করতে পারবেন না।
ব্যবসায়িক ক্ষতি এবং ফলাফল
রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্সের শেয়ারের দাম গত বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ ৫ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া, রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের শেয়ার প্রায় ১৩ শতাংশ ও রিলায়েন্স পাওয়ারের শেয়ারের দাম ৫ শতাংশ কমেছে। SEBI’র এই পদক্ষেপের ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়েছে।
অন্য ব্যবসায়ীরা
SEBI’র প্রতিবেদন অনুসারে, অনিল আম্বানির নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স গ্রুপের তিনটি প্রধান কোম্পানি, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল এবং রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার বর্তমানে ঋণ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে অনেক কোম্পানি দেউলিয়া বা দেউলিয়াপনার পথে রয়েছে।
অনিল আম্বানির ব্যবসায়িক প্রেক্ষাপট
রিলায়েন্স গ্রুপ আর্থিক সেবা, অবকাঠামো, এবং টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা পরিচালনা করে। এই গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন অনিল আম্বানির ভাই মুকেশ আম্বানি। পিতা ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর পর দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ ঘটে এবং এক পর্যায়ে তারা আলাদা হয়ে যান। একসময় অনিল আম্বানি মুকেশের চেয়ে ধনী ছিলেন, কিন্তু ভুল বিনিয়োগের কারণে তিনি দেউলিয়া হয়ে পড়েন।
রিলায়েন্স গ্রুপের তিনটি প্রধান কোম্পানি হলো রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল, এবং রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। তিনটি কোম্পানিই বর্তমানে দেউলিয়া বা ঋণ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
মালিকানা পরিবর্তন
অনিল আম্বানির ভাই মুকেশ আম্বানি বর্তমানে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান। ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর পর দুই ভাইয়ের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয় এবং একপর্যায়ে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। একসময় অনিল আম্বানি মুকেশের চেয়ে ধনী ছিলেন, কিন্তু ভুল বিনিয়োগের কারণে দেউলিয়া হয়ে পড়েন।
SEBI’র তদন্তের সারমর্ম
SEBI জানায় যে অনিল আম্বানি এবং তাঁর কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা পুঁজিবাজারের তহবিল অননুমোদিত খাতে সরিয়ে নিয়েছেন, যা কোম্পানি এবং এর শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি করেছে। ৯ হাজার কোটি রুপি অজ্ঞাত ঋণগ্রহীতাদের দেওয়া হয়েছিল, যাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ছিল না। SEBI’র রিপোর্ট অনুসারে, এই ঋণগুলির বেশির ভাগ এমন ব্যক্তির হাতে গেছে যারা কোম্পানির সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করতে সক্ষম ছিল।
ফিউচার রিটেইল এবং অন্যান্য
প্রসঙ্গত, পূর্বে ফিউচার রিটেইল-এর প্রধান কিশোর বিয়ানি এবং অন্যদেরও SEBI একই ধরনের অভিযোগে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। SEBI’র তদন্তে উঠে এসেছে যে এদেরও তহবিলের অপব্যবহার করা হয়েছিল।
অনিল আম্বানির প্রতিক্রিয়া
রিলায়েন্স গ্রুপের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, SEBI’র এই পদক্ষেপের পর শেয়ারবাজারে অনিল আম্বানির কোম্পানিগুলির শেয়ার তলিয়ে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় একটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
SEBI কি?
SEBI (Securities and Exchange Board of India) ভারতীয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা যা বাজারের নিয়মকানুন ও বিধি-নিষেধ পালন করে।
SEBI কী কারণে অনিল আম্বানিকে নিষিদ্ধ করেছে?
উত্তর: SEBI অনিল আম্বানিকে পুঁজিবাজার থেকে নিষিদ্ধ করেছে কারণ তিনি ও তাঁর সংস্থার কর্মকর্তারা পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ অননুমোদিত ব্যবসায় সরিয়ে নিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞার ফলে কি পরিবর্তন আসবে?
উত্তর: নিষেধাজ্ঞার ফলে অনিল আম্বানি এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীরা পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা বা অন্যান্য লেনদেন করতে পারবেন না।
SEBI কী ধরনের জরিমানা আরোপ করেছে?
উত্তর: SEBI অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে ২৫ কোটি রুপি জরিমানা আরোপ করেছে এবং অন্যান্য দোষীদের ২১ থেকে ২৫ কোটি রুপি জরিমানা করা হয়েছে।
রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্সের শেয়ার মূল্য কেমন প্রভাবিত হয়েছে?
উত্তর: নিষেধাজ্ঞার পরে রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্সের শেয়ার মূল্য ৫ শতাংশ কমেছে।
অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে?
উত্তর: অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি কোম্পানির তহবিল অননুমোদিত খাতে সরিয়ে নিয়েছেন এবং আর্থিক হিসাবনিকাশে কারসাজি করেছেন।
SEBI-এর তদন্তে কি বেরিয়ে এসেছে?
উত্তর: SEBI-এর তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে অনিল আম্বানি এবং তাঁর কর্মকর্তারা তহবিল অপব্যবহার করেছেন এবং অযোগ্য ঋণগ্রহীতাদের ঋণ প্রদান করেছেন।
রিলায়েন্স গ্রুপের মূল ব্যবসা কী?
উত্তর: রিলায়েন্স গ্রুপের মূল ব্যবসা আর্থিক সেবা, অবকাঠামো, এবং টেলিযোগাযোগে।
SEBI কীভাবে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে?
উত্তর: SEBI তদন্তের পর অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং জরিমানা করেছে।
রিলায়েন্স গ্রুপের কী অবস্থায় রয়েছে?
উত্তর: রিলায়েন্স গ্রুপের প্রধান কোম্পানিগুলো দেউলিয়া বা ঋণ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
SEBI এর এই পদক্ষেপের প্রভাব কী হতে পারে?
উত্তর: SEBI এর এই পদক্ষেপের ফলে শেয়ারবাজারে অনিল আম্বানি এবং তার সংস্থার শেয়ারমূল্য কমতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে পড়তে পারে।