আবারও সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারী আনসার সদস্যরা। তাঁদের বিক্ষোভের কারণে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েছেন। আজ রোববার দুপুর ১২টার পর থেকে সচিবালয়ের প্রধান ফটকসহ অন্যান্য গেটগুলোর সামনে অবস্থান নেন আনসার সদস্যরা। এই অবস্থান কর্মসূচির ফলে কেউ সচিবালয়ে প্রবেশ করতে বা সেখান থেকে বের হতে পারছেন না। পাঁচটি গেটই বন্ধ করে রাখতে হয়েছে, যার ফলে সচিবালয়ের ভেতরে এবং বাইরে অনেকেই বিপদে পড়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যান্য কাজে আসা লোকজন গেটগুলোর সামনে অপেক্ষা করছেন।

দুই দিন ধরে আনসার সদস্যরা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। অনেক আশ্বাস দেওয়ার পরও তাঁদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী আনসাররা।

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ের ফটকের সামনে আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদারও রয়েছেন। তাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সেখানে অবস্থান করছিলেন। সংঘর্ষের পরপরই আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন এবং রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আসে। এরপর আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তাঁরা কিছুক্ষণের জন্য সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েন। আহতদের সহায়তা করতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আনসার সদস্যদের দাবি ছিল, তাঁদের চাকরির স্থায়ীকরণ করতে হবে। কিন্তু সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও তাঁদের দাবি পূরণ হয়নি। এই কারণে আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। আন্দোলন চলাকালীন আনসার সদস্যদের একদল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টাদের আটকে রাখার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যায়। সেখানে গিয়ে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

এই সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীরা লাঠি এবং বাঁশের লাঠি ব্যবহার করেন। আনসার সদস্যরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং অনেকেই আহত হন। ঘটনাস্থলে আসার পর শিক্ষার্থীরা চারপাশ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা হলে আনসার সদস্যরা পিছু হটে। এসময় সচিবালয়ে অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হয়ে আসতে দেখা যায়।

আন্দোলনকারীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। চাকরি জাতীয়করণ এবং তাঁদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আনসারদের একাংশ দাবি করেন, তাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যা পূরণ হয়নি।

অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা সচিবালয় এবং এর আশেপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়। এর ফলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আনসার সদস্যরা এলাকা ছেড়ে চলে যান।

[helpie_faq group_id=’174’/]