বাংলাদেশে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর, বিভিন্ন থানায় ব্যাপক বিক্ষোভ এবং আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এই অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে, ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লুট হওয়া অস্ত্র এবং গোলাবারুদ জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান, যার উদ্দেশ্য ছিল লুট হওয়া এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা।

অস্ত্রের পরিমাণ এবং উদ্ধার পরিস্থিতি

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে লুট হওয়া অস্ত্রের মোট সংখ্যা ৫,৮১৮টি। এর মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৩,৯৩৩টি অস্ত্র। কিন্তু এখনও উদ্ধার করা যায়নি ১,৮৮৫টি অস্ত্র, যার মধ্যে রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি এবং পিস্তল অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, প্রায় ৩ লাখ গোলাবারুদ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

 

বাংলাদেশের অস্ত্র উদ্ধারে চলমান অভিযান

উদ্ধার এবং অবশিষ্ট অস্ত্রের বিস্তারিত:

  • চায়না রাইফেল: উদ্ধার ৮৩৯টি, উদ্ধার হয়নি ২৯৬টি।
  • বাংলাদেশি রাইফেল: উদ্ধার ৯টি, উদ্ধার হয়নি ১টি।
  • এসএমজি: উদ্ধার ১৯১টি, উদ্ধার হয়নি ৬০টি।
  • এলএমজি: উদ্ধার ২১টি, উদ্ধার হয়নি ১১টি।
  • পিস্তল: উদ্ধার ৭৩১টি, উদ্ধার হয়নি ৮২৫টি।
  • ৯x১৯ মি.মি. এসএমজি/এসএমটি: উদ্ধার ৩২টি, উদ্ধার হয়নি ১টি।
  • শটগান: উদ্ধার ১,৬২৪টি, উদ্ধার হয়নি ৬৭টি।
  • গ্যাস গান: উদ্ধার ৪৭৬টি, উদ্ধার হয়নি ১১৭টি।
  • টিয়ার গ্যাস লঞ্চার (সিক্স শট): উদ্ধার ৯টি, উদ্ধার হয়নি ৫টি।
  • সিগন্যাল পিস্তল: উদ্ধার ১টি, উদ্ধার হয়নি ২টি।

গোলাবারুদের পরিমাণ এবং উদ্ধার পরিস্থিতি:

  • বিভিন্ন বোরের গুলি: উদ্ধার ৩,১২,৮৫৭টি, উদ্ধার হয়নি ২,৯৪,৪০৫টি।
  • টিয়ারগ্যাসের শেল: উদ্ধার ২৩,১৯৪টি, উদ্ধার হয়নি ৮,৮১১টি।
  • টিয়ারগ্যাস গ্রেনেড: উদ্ধার ৭০৪টি, উদ্ধার হয়নি ৭৫১টি।
  • সাউন্ড গ্রেনেড: উদ্ধার ২,১২৮টি, উদ্ধার হয়নি ২,৫৬৪টি।
  • কালার স্মোক গ্রেনেড: উদ্ধার ২১৩টি, উদ্ধার হয়নি ৭৮টি।
  • মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড: উদ্ধার ১৮টি, উদ্ধার হয়নি ৩৭টি।
  • ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড: উদ্ধার ৫৩৩টি, উদ্ধার হয়নি ৩৬০টি।
  • গ্যান্ড হেল্ড টিয়ার গ্যাস স্প্রে (ক্যানিস্টার): উদ্ধার ৯৪টি, উদ্ধার হয়নি ৮৩টি।

যৌথ বাহিনীর অভিযান

এই অভিযান পরিচালনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্টগার্ড এবং র‌্যাব। বিভিন্ন সংস্থার একযোগিতায় লুট হওয়া অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করা হচ্ছে। এই অভিযান চলমান এবং এর মাধ্যমে লক্ষ্যের কিছু অংশ উদ্ধার করা হলেও, বেহাত হওয়া অস্ত্র এবং গোলাবারুদ এখনও বিশাল সংখ্যায় উদ্ধার হয়নি।

সামাজিক প্রভাব এবং আইন-শৃঙ্খলা

অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধারের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার আশা কম। সন্ত্রাসীরা এসব অস্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য এলাকায় বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড এবং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করার জন্য প্রভূত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে লুট হওয়া অস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহৃত না হয় এবং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করা যায়।