আজ বুধবার, ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় নানা দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এই বিক্ষোভের ফলস্বরূপ, কর্তৃপক্ষ অন্তত ৬০টি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মূল কারণ হলো বিভিন্ন সুবিধা, বেতন বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার দাবি।

সকালে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেন। কিন্তু সকাল সাড়ে আটটার দিকে, বন্ধ ঘোষিত কারখানার শ্রমিকরা চালু থাকা কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা ইট-পাটকেল ছুঁড়ে এবং বিভিন্ন কারখানার সামনে ভাঙচুর করেন। এই অবস্থায়, চাকরি প্রার্থীরা ও অন্যান্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যোগদান করলে, কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করতে। এরপর শ্রমিকরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন।

নরসিংহপুর এলাকায়, হা-মীম গ্রুপের কারখানার পাশে চায়ের দোকানদার জানিয়েছেন যে, সকাল থেকেই কারখানার কাজ চলছিল। কিন্তু চাকরির জন্য লোকজন এসে বিক্ষোভ শুরু করলে, কারখানাটি ছুটি দিয়ে দেয়।

শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, সকালে কারখানায় কাজ শুরু হওয়ার পর, কিছু বহিরাগত লোক স্টাফদের বহনকারী মিনিবাস ভাঙচুর করে। নিরাপত্তার জন্য কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

সকাল ১০টার দিকে, পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের সামনে, টিফিট ভাতা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো নানা দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে, নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে দেন শ্রমিকরা, যার ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা দুইটার দিকে, সেনাবাহিনী ও ঢাকা জেলা পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন, কিন্তু শ্রমিকরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়কে থাকার ঘোষণা দেন। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে, কিছু কারখানার শ্রমিকরা হামলা ঠেকাতে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানার সামনে শ্রমিকরা কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলেন, ‘আমরা কাজ করতে চাই। কারখানা আমাদের সম্পদ, তাই এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কারখানা বন্ধ হলে আমরা কী খাব?’

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানিয়েছেন, শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ে কারখানায় এসে পরে বিভিন্ন কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। হা-মীম গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের দেখে, কেন তারা কাজ করছেন, এমন প্রশ্নের পরে, কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। আশুলিয়ার অন্তত ৬০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

আজ, গাজীপুর, সাভার এবং আশুলিয়ায় শতাধিক পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সকালে, পোশাক শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেন এবং কার্যক্রম চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করে টঙ্গী বিসিক, ভোগরা বাইপাস, বাঘের বাজার ও মাওনা এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।

শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে, আশুলিয়ায় অন্তত ৬০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বিঘ্নিত করেছেন। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্পপুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এদিকে, কারখানা মালিকরা জানিয়েছেন, যতদিন শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে থাকবে, ততদিন ছুটি দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। শ্রমিকরা বিক্ষোভের মুখে, কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে, বিভিন্ন কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে।