বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পনেরো বছরের শাসনকালে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এই সময়ে অনেক টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে, যা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আসুন, আমরা এই সমস্যাগুলি বিশদভাবে জানি এবং তাদের সমাধানের উপায় খুঁজে বের করি।
অর্থ পাচার ও ঋণের বোঝা
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৭.৬০ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা ডলারে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া, দেশের বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৫.৫৮ লাখ কোটি টাকা। এই ঋণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে চাপ পড়েছে। সরকার কোন নিয়মনীতি মেনে না চলার কারণে ৬০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুদ্রা বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলে বাজারে টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং এর বিপরীতে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভেঙে পড়েছে।
ব্যাংক ঋণ ও ফেরত না দেওয়ার সমস্যা
সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিতে পারছে না। এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.১১ লাখ কোটি টাকা। এই সমস্যাগুলি আমাদের দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমাচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
এই সব সমস্যার ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দিন দিন বাড়ছে। আমরা যখন বাজারে যাই, তখন দেখি যে অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে আমাদের জীবনযাত্রা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ডলার সঙ্কট
এছাড়া, ডলার সঙ্কটও আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। ডলারের অভাবে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে কার্যকরী হতে পারছে না। এতে আমাদের আমদানি-রপ্তানিতে বিপর্যয় ঘটছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংকটে ফেলছে।
আমাদের করণীয়
এই সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
সৎভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করা
- প্রথমত, সরকারের উচিত সৎভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করা। টাকা পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আমাদের দেশের টাকা দেশে রেখে ব্যবসা বাড়াতে হবে।
- দ্বিতীয়ত, একটি কার্যকর নীতিমালা তৈরী করতে হবে, যাতে সরকারি ঋণের ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হয়। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণগুলো সঠিকভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করতে হবে।
- তৃতীয়ত, কৃষি ও শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। আমাদের দেশে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, তাই এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। এ ছাড়া, নতুন শিল্প গড়ে তোলা হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে।
সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা
সবশেষে, সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে সরকারের নীতি নিয়ে উদ্বেগ থাকলে তারা বিনিয়োগ করতে চাবে না। তাই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
শেষ কথা
আমাদের দেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থ পাচার, ঋণের বোঝা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ডলার সঙ্কট—এসব সমস্যা আমাদের সমাজ ও অর্থনীতিকে আঘাত করছে। তবে যদি আমরা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তাহলে আশা করা যায় আমরা এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া