বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নতুন অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪ প্রবর্তন করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আইনটির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। আসুন, আইনটির মূল সুবিধাগুলি বিশদভাবে জানি।

বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুবিধা

এই নতুন আইনের অধীনে, যে কোনো বাংলাদেশী, বিদেশী নাগরিক, দেশে-বিদেশে নিবন্ধিত ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে অনুমোদিত ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ পাবেন। এতে বিনিয়োগের পরিধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।

বৈচিত্র্যময় লেনদেনের সুযোগ

ব্যাংকিং ইউনিটে মার্কিন ডলার, ইউরো, গ্রেট ব্রিটেন পাউন্ড, জাপানিজ ইয়েন, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সুইস ফ্র্যা, চাইনিজ ইউয়ান এবং সিঙ্গাপুর ডলারসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করার সুযোগ থাকবে। এই বৈচিত্র্য বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও সুবিধাজনক হবে।

বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা জমার সুযোগ

বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনীত যে কোনো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উল্লিখিত হিসাবে জমা করা যাবে। এটি বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যা তাদের অর্থ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে।

সুদ/মুনাফার হার

আমানতের উপর মুদ্রাভেদে রেফারেন্স রেটের অতিরিক্ত ১.৫% হতে ৩.২৫% পর্যন্ত সুদ বা মুনাফা প্রদান করা হবে। বর্তমানে ডলারের বিপরীতে আনুমানিক ৮.৫৫% সুদের হার পাওয়া যাবে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।

অর্থ ফেরত নেওয়ার সুবিধা

অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের হিসাবের স্থিতি হতে দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় ব্যয় ও বিনিয়োগের পাশাপাশি অব্যবহৃত অংশ সুদ বা মুনাফাসহ পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে বিদেশে ফেরত নিয়ে যাওয়া যাবে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।

কর অব্যাহতির সুবিধা

অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট হতে আমানতকারী বা বিদেশী/অনিবাসী ঋণদাতা কর্তৃক গৃহীত সুদ বা মুনাফাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এটি বিনিয়োগের আকর্ষণ বাড়াবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

শেষ কখা

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪ দেশের অর্থনীতির জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই আইনটি দেশে এবং বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। আশা করা যায়, এই আইন কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে।