বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন একটা বড় পরিবর্তন আসছে। ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য নিলম্বিত করেছে। যদিও বোর্ডের পক্ষ থেকে জানা গেছে, পরে তাঁকে সম্পূর্ণরূপে ছাঁটাই করা হবে। এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফিল সিমন্স নতুন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।

বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ রয়েছে। এক, তিনি একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। দুই, তিনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ছুটি নিয়েছেন। এর কারণে তাঁকে নিলম্বিত করা হয়েছে।

হাথুরুসিংহ ফেব্রুয়ারিতে আবার বাংলাদেশের কোচ হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু আগস্টে ফারুক বোর্ডের সভাপতি হওয়ার পর জানান, তিনি হাথুরুসিংহকে চান না। কারণ, তাঁর অধীনে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এক দিনের বিশ্বকাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা সফল হয়নি। যদিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল, কিন্তু ভারতের বিপক্ষে তারা কিছুই করতে পারেনি।

হাথুরুসিংহ একজন শ্রীলঙ্কান। তিনি দেশের হয়ে ২৬টি টেস্ট এবং ৩৫টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের কোচ ছিলেন, তারপর শ্রীলঙ্কার কোচও ছিলেন। ২০২৩ সালে আবার বাংলাদেশের কোচ হন। তবে মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়ে দেন, এবং এবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

হাথুরুসিংহকে নিলম্বিত করার পেছনে মূল কারণ হলো, একজন জাতীয় ক্রিকেটারের গায়ে হাত তোলা এবং নিয়ম ভঙ্গ করে অতিরিক্ত ছুটি কাটানো। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এমনকি, বিশ্বকাপের সময় এই ঘটনা ঘটে। তখন নাসুম আহমেদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠেছিল।

বিসিবি সভাপতি ফারুক বলেছেন, “এটা খুব পীড়াদায়ক ছিল আমার জন্য।” তিনি যোগ করেছেন যে, এটি ক্রিকেট দলের জন্যও ভালো কিছু ছিল না। তিনি আরও জানান, এই ঘটনার পর থেকে তিনি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।

ফারুক আহমেদ বলেছেন, “যেহেতু এটা শারীরিক আক্রমণ, তাই এর শাস্তি হওয়া উচিত। একজন জাতীয় ক্রিকেটারের প্রতি এই ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।”

ফারুকের কথায় আরও উল্লেখ আছে যে, হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে একটি বড় কারণ হলো, তিনি নিয়মের তোয়াক্কা করেননি। তিনি অতিরিক্ত ছুটি কাটিয়েছেন, যা তার জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।

এখন নতুন কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। ফিল সিমন্সের বয়স ৬১ বছর। এর আগে তিনি আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। তাঁর অধীনে ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল।

২১ অক্টোবর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ শুরু হবে। ফিল সিমন্সের নতুন দায়িত্ব এখান থেকেই শুরু হবে। এই সিরিজের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজও আসছে।

এই সব ঘটনার পর বোর্ডের সিদ্ধান্ত দেশের ক্রিকেটকে নতুন একটি দিগন্তে নিয়ে যাবে। সবাই আশা করছে, ফিল সিমন্সের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নতুন সাফল্য অর্জন করবে। হাথুরুসিংহের সময়কাল শেষ হওয়ার পর নতুন কোচের আগমন দেশের ক্রিকেটে অনেক আশা জাগাচ্ছে।

ক্রিকেটের মঞ্চে এমন পরিবর্তন সাধারনত অনেক আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে আসে। কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে অস্থিরতা ছিল, কিন্তু নতুন কোচ আসার ফলে সকলেই আশাবাদী। ফিল সিমন্সের কোচিংয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল আরও উন্নতি করবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করবে।

সব মিলিয়ে, এই পরিবর্তন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবার আশা, ফিল সিমন্স দলে নতুন উদ্যম যোগাতে পারবেন এবং ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয়ে আরও সাফল্য বয়ে আনবেন।