বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়স ২৫ বছরের পরিবর্তে ১৮ বছর নির্ধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এই পদক্ষেপটি দেশের তরুণ ভোটারদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকারের দিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে।
লিগ্যাল নোটিশের বিষয়বস্তু
মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’ সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এর মাধ্যমে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। এই নোটিশটি জাতীয় সংসদের স্পিকার, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রদান করা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে একজন নাগরিকের বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হয়। কিন্তু এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো নাগরিক ২৫ বছরের কম বয়সী হলেও সে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবে, অর্থাৎ ১৮ বছর হলেই একজন নাগরিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
বর্তমান বিধির সমস্যাসমূহ
বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী, দেশের কোটি কোটি তরুণ, যারা অন্য সব যোগ্যতা অর্জন করেছেন, শুধুমাত্র বয়সের কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এই নিয়ম সংবিধানের মৌলিক ধারণা ও মর্মার্থের সাথে সাংঘর্ষিক, এবং তরুণদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।
সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গণতন্ত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। অনুচ্ছেদ ১১ অনুযায়ী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী, এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ এবং সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন।
বয়সভিত্তিক যোগ্যতার সমস্যা
১৮৭৫ সালের সাবালকত্ব আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর পূর্ণ হলে একজন ব্যক্তি সাবালক হিসেবে গণ্য হন এবং আইন অনুযায়ী নিজের পছন্দ অনুসারে কর্ম করতে পারেন। ২০০৯ সালের ভোটার তালিকা আইনের ৭ ধারার অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সী ব্যক্তি যেকোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ২৫ বছরের বয়সের শর্ত আরোপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং সংবিধানের মূল কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক।
এই ধরনের বিধান একটি অযাচিত এবং নিপীড়নমূলক বাধা সৃষ্টি করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ২৫ বছরের বয়সভিত্তিক যোগ্যতার শর্তটি অসাংবিধানিক এবং তরুণ ভোটারদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।
পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশের সংবিধানে ৫২ বছর আগে ২৫ বছরের যোগ্যতার বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। তবে, এই দীর্ঘ সময় ধরে দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোটি কোটি তরুণ স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তারা বহু ক্ষেত্রে সফল হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, ২৫ বছরের বয়সভিত্তিক যোগ্যতার শর্তটি আজকের যুগের প্রয়োজনীয়তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আজকের ‘জেনারেশন জি’ এবং আগামীর ‘আলফা জেনারেশন’ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাই, বয়সের এই বাধা পরিবর্তন করে ১৮ বছর বয়সী নাগরিকদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
আইন সংশোধনের জন্য অনুরোধ
আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সব নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী নাগরিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করতে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী করা প্রয়োজন। নোটিশে এই বিষয়টি জরুরিভাবে সমাধান না হলে পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপটি দেশের তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করবে এবং সংবিধানের মৌলিক ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।