বাংলাদেশের সংস্কার আগামী নির্বাচন যে পদ্ধতিতে হতে পারে

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে বাংলাদেশে নানা আলোচনা চলছে। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে ভাবছে, যার মধ্যে আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির কথাও রয়েছে। এই নিয়ে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।

বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষজ্ঞরা, এবং সাধারণ মানুষ সবাই এই সংস্কারের দিকে নজর দিচ্ছে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে আমাদের নতুন কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় একজন প্রার্থী কম ভোট পেলেও জিততে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন প্রার্থী ৪০ হাজার ভোট পায় এবং তার তিন প্রতিদ্বন্দ্বী মিলে ৬০ হাজার ভোট পায়, তবুও ওই প্রার্থী জয়ী হতে পারেন। এইভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি আসলে জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করেন না।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার কারণে, যদি এই পদ্ধতি বহাল থাকে, তবে বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে ভালো অবস্থানে থাকবে। তারা মনে করছে যে আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। যদিও বিএনপির অন্যান্য জোটের সদস্যরাও আসন বণ্টনের জন্য আনুপাতিক পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে, তবে এটি আওয়ামী লীগের জন্যও সুবিধাজনক হতে পারে। যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, তবে তারা আনুপাতিক ভোটে লাভবান হতে পারে।

শ্রীলঙ্কার নির্বাচন ব্যবস্থা আমাদের কাছে দারুণ উদাহরণ হতে পারে। সেখানে ভোটারেরা প্রথমে পছন্দের দল বেছে নেন এবং তারপর সেই দলের প্রার্থীদের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোট দেন। এটি তাদের মধ্যে অংশগ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করেছে। শ্রীলঙ্কায় জাতিগত সমস্যা ছিল, যেখানে সিংহলি ও তামিল জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন ছিল। আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির মাধ্যমে তারা এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছে।

অন্যদিকে, নেপালে নির্বাচনী সংস্কার ঘটেছে মূলত সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেখানে পুরনো পদ্ধতিতে গরিব ও দলিত জনগণের প্রতিনিধিত্ব কম ছিল। কিন্তু আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বেড়েছে। এখানে তিন স্তরের নির্বাচন হয়: জাতীয় পার্লামেন্ট, প্রাদেশিক সরকার এবং স্থানীয় সরকার। এই পদ্ধতিতে অন্তত ৩০% নারী প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশেও যদি আমরা এসব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখতে পারি, তবে সমাজের নানান শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে নারী, সংখ্যালঘু জাতি এবং প্রান্তিক জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো দরকার। এজন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।

তবে সংস্কারের জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি প্রয়োজন। বিশেষ করে বিএনপির সমর্থন পাওয়া খুব জরুরি। তারা যদি আনুপাতিক পদ্ধতির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে, তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার।

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হবে। আমাদের নির্বাচনী পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত, যা সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।

সবশেষে, আমাদের উচিত শ্রীলঙ্কা ও নেপালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং একটি কার্যকরী, সুষ্ঠু এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।