ফুটবল মাঠে অনেক সময় উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত আসে। আজকের ম্যাচেও এমনই একটি মুহূর্ত আমরা দেখতে পেলাম। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ফুটবল দল ভুটানের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জয় লাভ করেছে। এই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের ফুটবল দলের জন্য বিশেষ একটি মাইলফলক, কারণ থিম্পুতে এটি তাদের প্রথম জয়।

প্রথমার্ধের চ্যালেঞ্জ

ম্যাচের প্রথমার্ধে, বাংলাদেশের ফুটবলার রাকিব আকস্মিকভাবে মাঠে পড়ে যান। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময়, ভুটানী স্ট্রেচার বহনকারী অসুস্থবোধ করেন। পরে, রাকিবের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া আজ একাদশে ছিলেন না। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে জামালকে মাঠে নামান। জামাল না থাকলেও, দলের পারফরম্যান্সে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়নি।

উচ্চতার প্রভাব

ভুটানের রাজধানী থিম্পুর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ৮ হাজার ফুট। এই উচ্চতা বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের শারীরিক কন্ডিশনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ভুটান গিয়েও খেলোয়াড়রা উচ্চতার কারণে সমস্যায় পড়েছে বলে শোনা যাচ্ছিল।

মোরছালিনের গোল এবং ম্যাচের ফলাফল

ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে, রাকিব হোসেনের ক্রস ভুটানের গোলকিপার শেরিন ধেনদুপ ঠিকমতো ধরে রাখতে পারেননি। এই সুযোগে শেখ মোরছালিন গোল করে দেন। এই একমাত্র গোলেই বাংলাদেশ জয় লাভ করে।

মোরছালিনের গোল ছিল ম্যাচের সেরা মুহূর্ত। বাকি সময় বাংলাদেশ একাধিক সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। দলের খেলায় কন্ডিশনের প্রভাব দেখা গিয়েছিল। রাকিব, মোরছালিন, এবং ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা ভুটানের রক্ষণকে আতঙ্কিত করতে পারেননি। বরং, ভুটান দল বলের দখল নিজেদের পায়ে রেখে বারবার আক্রমণ করেছে, কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় তারা সফল হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের পরিস্থিতি

জামাল ভূঁইয়া দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিটের পরে মাঠে নামেন। এই সময়ে বাংলাদেশ কিছু কর্নারও আদায় করে। শাহরিয়ার ইমন একটি সুযোগ নষ্ট করেন এবং রাব্বি হোসেন রাহুলের একটি দারুণ শট ভুটানের গোলকিপার কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন।

উচ্চতার কারণে বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা দ্বিতীয়ার্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, যা তাদের শরীরী ভাষাতেই ফুটে উঠেছিল। কোচ কাবরেরা কৌশল সাজিয়েছিলেন ভুটানের উচ্চতার কথা চিন্তা করে, তাই দলের প্রবণতা ছিল ধীরেসুস্থে খেলা। শেষ পর্যন্ত এই কৌশল কাজ করেছে এবং বাংলাদেশ ম্যাচটি ভালোভাবে শেষ করেছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

৮ সেপ্টেম্বর একই মাঠে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের এই প্রথম জয়। শেখ মোরছালিনের একমাত্র গোলে তারা জয়লাভ করেছে। তবে, ম্যাচটি জয়লাভ করার পরও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকে গেছে।

ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ভাগ্যের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা খানিকটা সৌভাগ্যবান গোলের ক্ষেত্রে। ২০-২৫ মিনিট পর্যন্ত আমরা স্ট্রাগল করছিলাম। তবে, ম্যাচ জেতায় খুশি।’

সামনে চ্যালেঞ্জ

ভুটানে দুটি প্রীতি ম্যাচের পরবর্তী ম্যাচে জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবেন বাংলাদেশ। কোচ কাবরেরা জানিয়েছেন, “আমরা জানি আমাদের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। তবে, আমরা এখানে দুটো ম্যাচ জয়ের লক্ষ্যে এসেছি।”

অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, “ভুটান একটি শক্তিশালী দল। তাদের বেশ কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় আছে। ম্যাচটি কঠিন হবে, কারণ আমরা তিন মাস কোনো ম্যাচ খেলিনি।”

নতুন লক্ষ্য

বাংলাদেশের আগামী বছরের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় পর্বের প্রস্তুতির জন্য এই সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে গ্রুপের ড্রয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া যাবে। ভুটানের জন্যও এই সিরিজ প্রস্তুতির সুযোগ।

আজকের জয় বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আগামী ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স আরও উন্নত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।