বাংলাদেশ সম্প্রতি জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতনবিষয়ক কনভেনশন বা সনদে স্বাক্ষর করেছে। এই সনদটির নাম হলো “আন্তর্জাতিক কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পার্সনস ফ্রম ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স” (International Convention for the Protection of All Persons from Enforced Disappearance)। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সনদে স্বাক্ষর করেন। উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় ড. ইউনূস উপদেষ্টাদের করতালির মধ্যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের এক দিন আগে এই সনদে স্বাক্ষর করা হলো।
ড. ইউনূস এই সময় বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। গুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এটি আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের এক দিন আগে স্বাক্ষরিত হওয়ায় এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ গুম বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এর আগে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে, অন্তর্র্বতী সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে গুমের প্রতিটি ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস। এই কমিটিকে আগামী ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে গুমবিরোধী সনদটি গৃহীত হয়। ৩২টি দেশ এটি অনুস্বাক্ষর করার পর ২০১০ সালে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে। সনদের মূল লক্ষ্য হলো গুম বন্ধ করা, এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান করা।
বাংলাদেশের জন্য এই সনদে স্বাক্ষর করা একটি বড় পদক্ষেপ এবং এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সনদগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক জোরালো বার্তা প্রদান করলো।